পটুয়াখালী জেলার দশমিনা উপজেলায় গরু ও মহিষে আবর্তিত হচ্ছে অর্থনীতির গতি। এই অঞ্চলের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে এখন শুধু পারিবারিক আয়ের উৎস হিসেবে নয়, এটি দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও স্থানীয় অর্থনীতির উন্নয়নের প্রধান চালিকা শক্তিতে পরিণত হয়েছে। কৃষি কাজের পাশাপাশি গরু ও মহিষ পালন করে হাজারো ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
উল্লেখ্য, এই খাতে যুক্ত অধিকাংশ খামারিই ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে নয়, নিজস্ব শ্রম ও সীমিত পুঁজি বিনিয়োগ করে উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছেন। উপজেলাভিত্তিক প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে দশমিনা উপজেলায় ৫ হাজার ৬২০টির বেশি গরু ও মহিষ পালিত হচ্ছে। এর মধ্যে রনগোপালদী ও চর বোরহান ইউনিয়নে প্রায় দুই হাজার ৫০০, আলীপুরা ইউনিয়নে এক হাজার ৩০০, বেতাগী-সানকিপুর ইউনিয়নে এক হাজার ১০০, বহরমপুরে এক হাজার ১৫০, বাঁশবাড়িয়ায় এক হাজার ৯০০ ও সদর ইউনিয়নে প্রায় এক হাজার ৯৫০ পশু রয়েছে।
প্রাণিসম্পদ বিভাগ বলছে, উপজেলায় মোট গবাদিপশুর প্রায় ৬৫ শতাংশই মহিষ, যা দেশের অন্যান্য এলাকার তুলনায় ব্যতিক্রম। চরাঞ্চলের পরিবেশ মহিষের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী বলে জানা গেছে। একজন মহিষ সাধারণ গৃহপালিত গরুর তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ দুধ ও দেড়গুণ বেশি মাংস উৎপাদনে সক্ষম। পূর্বাভাস অনুযায়ী, এখানে অবস্থিত মহিষ থেকে বছরে প্রায় ১০ লক্ষ ৫০ হাজার লিটার দুধ ও সাত লক্ষ ৪০ হাজার কেজি মাংস উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
সদরঘাট এলাকার খামারি আবদুস সালাম বলেন, আগে শুধুমাত্র ধান চাষ করতেন, যার কারণে পরিবারে ধার-দেনা তো থাকতই, সংসার চালানোও কঠিন ছিল। এখন তার তিনটি গরু ও একটি মহিষ রয়েছে। দুধ বিক্রি করে প্রতিদিন গড়ে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকার আয়ে তার পরিবার অনেকটাই স্বাবলম্বী হয়েছে।
এছাড়া, উপজেলার কৃষি কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মোট জমির প্রায় ২৫ শতাংশ চরাঞ্চল। এর মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ জমি অনাবাদি এবং ৭৫ শতাংশ জমিই ধানচাষের জন্য ব্যবহৃত হয়। বছরের ছয় মাসের মত সময়ে এই এলাকার ফসলি জমিতে কোনও কৃষি কাজ হয় না। ফলে কৃষির আয়ের ওপর নির্ভরতা কমে যায়। এই পরিস্থিতিতে চরাঞ্চলে গবাদিপশু পালনের বিকল্প হিসেবে গুরুত্ব ME।
তবে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। চর সামাদ এলাকার খামারি করিম মোল্লা উল্লেখ করেন, পশু অকস্মাৎ অসুস্থ হলে চিকিৎসার জন্য মূল ভূখণ্ডে যেতে হয়, যা সময় ও অর্থ দুটোই খরচ করে। অনেক সময় দেরি হয়ে গেলে পশু মারা যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, চরাঞ্চলগুলোকে পরিকল্পিতভাবে চারণভূমি হিসেবে ঘোষণা করে উন্নত ঘাসচাষ, নিয়মিত টিকাদান, স্বল্প সুদে ঋণ, প্রশিক্ষণ ও বাজারজাতকরণে উন্নয়ন করে স্থানীয় মানুষকে স্বাবলম্বী করা সম্ভব। এতে করে হাজারো পরিবার সুখে-শান্তিতে থাকতে পারবে, পাশাপাশি জেলার দুধ ও মাংসের চাহিদা পূরণে অনেক টাকা রাজস্ব আয় হবে।
দশমিনা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শুভেন্দু সরকার বাসসকে বলেন, ‘চরাঞ্চলে গরু ও মহিষ পালনের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে মহিষের জন্য প্রাকৃতিক বাথান ও বিস্তীর্ণ চরভূমি রয়েছে।’ তিনি যোগ করেন, ‘চরাঞ্চলের পরিবেশ মহিষের জন্য বিশেষ উপযোগী। শীতকালে পানির সংস্পর্শে থাকলে তাদের প্রজনন হারও বাড়ে। হাঁস পালনের মাধ্যমেও এখানে অত্যন্ত সম্ভাবনা রয়েছে।’
স্থানীয় মানুষ প্রত্যাশা করছেন, সরকারি ও বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ সফল হলে দশমিনার অবহেলিত চরাঞ্চলগুলো দ্রুত সময়ে গরু ও মহিষ উৎপাদনের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। এতে দারিদ্র্য কমবে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং জাতীয় অর্থনীতিতেও বড় অগ্রগতি হবে।





