গাজা উপত্যকার সমুদ্রতীরবর্তী গ্যাসক্ষেত্র থেকে অর্জিত অর্থ ব্যবহার করে পুরো অঞ্চলের ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামো পুনর্গঠনের পরিকল্পনা আলোচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের মতে, এই আলোচনাগুলি বিভিন্ন দৃষ্টিকোণে হয়েছে। একটি প্রস্তাব অনুযায়ী, আবুধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি (এডনক) গাজার অবশিষ্ট গ্যাসক্ষেত্রের মালিকানায় অংশ নেবে এবং এখান থেকে প্রাপ্ত অর্থ পুনর্গঠনের কাজে ব্যয় করা হবে। যদিও এই আলোচনাগুলি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও নেওয়া হয়নি। যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষরের আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্র গাজার জন্য পরিকল্পনা চালু রেখেছিল, যার বর্তমান অবস্থা অল্পই বদলায়নি। তবে এক সাবেক পশ্চিমা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ডিসেম্বরে গাজার গ্যাস থেকে অর্থ উপার্জনের পরিকল্পনা আবার ভাবনায় এসেছে। ২০০০ সালে গাজার সামুদ্রিক এলাকায় গ্যাস আবিষ্কৃত হয়, যা এখনও উন্নয়নের জন্য অপেক্ষা করছে। এই গ্যাস ক্ষেত্রের মালিকানা দুটি প্রতিষ্ঠানের হাতে—ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সার্বভৌম তহবিল প্যালেস্টাইন ইনভেস্টমেন্ট ফোরাম এবং কনসোলিডেটেড কন্ট্রাক্টরস কোম্পানি। এই কোম্পানির মালিকানাধিকার গ্রিসের এক প্রবাসী ফিলিস্তিনি পরিবারের। এই প্রকল্পের প্রায় ৪৫ শতাংশ মালিকানা একটি আন্তর্জাতিক অংশীদারের জন্য সংরক্ষিত, যেখানে ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার আগে মিসর এই অংশীদারিত্বে আগ্রহ দেখায়। জাতিসংঘ এই দখল ও যুদ্ধকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে স্বীকার করেছে। আন্তর্জাতিক গ্যাস বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রকল্পটি অর্থনৈতিক দিক থেকে বেশ লাভজনক। যখন ১৫ বছর আগে এই প্রকল্পে কাজ শুরু হয়, তখন এর নির্মাণে খরচ ধরা হয়েছিল ৭৫ কোটি ডলার, এবং আয় ছিল প্রায় ৪০০ কোটি ডলার। এর থেকে প্রতিবছর ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ১০ কোটি ডলার করে লভ্যাংশ পেত। বর্তমানে এটি ফিলিস্তিনের অন্যতম মূল্যবান সম্পদ। জাতিসংঘের অনুমান, গাজার পুরো পুনর্গঠন করতে প্রায় ৭ হাজার কোটি ডলার প্রয়োজন হবে, তবে এখনো পর্যন্ত মার্কিন ও ইসরায়েল এই পুনর্নির্মাণের ব্যাপারে অঙ্গীকার করেনি। বরং ট্রাম্প এর আগের এক পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইসরায়েলি অধিকৃত গাজার অর্ধেকের অস্থায়ী বসতি তৈরির পরিকল্পনা চলছে। সাবেক পশ্চিমা কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা মিসর এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের কূটনীতিকের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। এরা সবাই গাজার বিভাজন প্রশংসা করেননি। ট্রাম্পের পরিকল্পনায় মার্কিন স্বরাষ্ট্র ও সামরিক বাহিনী মোতায়েনের সম্ভাবনাও এখন খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। কাতার এবং সৌদি আরব গাজার পুনর্গঠনের ব্যাপারে অর্থায়নে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছে। কাতার বলেছেন, অন্যরা যা ধ্বংস করেছে, তার পুনর্নির্মাণের ছোটখাটো উদ্যোগ তারা নেবে না। আর সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানও ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে তহবিলের প্রতিশ্রুতি দেননি। এই পরিস্থিতিতে, সংযুক্ত আরব আমিরাত এখন গাজায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মূল অংশীদার হিসেবে দেখা হচ্ছে। এখনকার সময়ে আবুধাবি গাজায় সবচেয়ে বড় মানবিক ও ত্রাণ সহায়তা দাতা। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ট্রাম্প প্রশাসন গাজার ক্ষেত্রেও ইউক্রেন ও আফ্রিকার মতো প্রাকৃতিক সম্পদ (বিশেষ করে গ্যাস) ব্যবহার করে অর্থনৈতিক সুবিধা গ্রহণের পরিকল্পনা করছে বলে।





