সোমবার, ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৫, ৭ই পৌষ, ১৪৩২

সরকারি অনুমোদনের জন্য অপেক্ষায় পুণ্ড্র ইকোনমিক জোন

বগুড়ায় এক নতুন জটিলতা বদলাতে চলেছে দেশের অর্থনৈতিক মানচিত্র। পাঁচ হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে প্রায় দশ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছেন, এক বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে ‘প্রাইভেট পুণ্ড্র ইকোনমিক জোন’। এই শিল্পাঞ্চলটি নির্মাণের কাজ করছে ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ (টিএমএসএস) এবং এর অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন লিমিটেড (বিসিএল)। খবরটি এখন শিল্প ও ব্যবসায়ী মহলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে কারণ এটি সম্পূর্ণভাবে চালু হলে উত্তরাঞ্চলের অর্থনৈতিক চেহারা বদলে যেতে পারে। দ্রুত এই প্লাম্পটিকে সম্পন্ন করে চালু করলে এখানে আন্তর্জাতিক মানের গ্লাস, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, ভেষজ তেল উৎপাদন কারখানা, ফিডমিল, ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পসহ বিভিন্ন ধরনের শিল্প-কারখানা গড়ে উঠবে। জানা যায়, ২০২১ সালে ঢাকার রংপুর মহাসড়কের পাশে বগুড়ার গোকুল এলাকায় প্রায় ৪০০ বিঘা জমি নিয়ে এই অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। বর্তমানে আরও ১০০ বিঘা জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান থাকায় অনূমিত জমির পরিমাণ দাঁড়াবে মোট ৫০০ বিঘায়। প্রাইভেট পুণ্ড্র এইকোনমিক জোনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশের বড় বড় কোম্পানি ও ব্যবসায়ী গ্রুপগুলো এখানে শিল্প-কারখানা স্থাপনে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রাথমিকভাবে দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হবে। নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই (নেসকো) ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রস্তুতি নিয়েছে। তবে, শিল্পায়ন দ্রুতগতিতে এগিয়ে নেওয়ার জন্য গ্যাসের প্রয়োজন বড় একটি সমস্যা। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে আলোচনা চলছে। এই অঞ্চলে একটি বিশাল বিনিয়োগে (প্রায় ১২০০ কোটি টাকা) গ্লাস কারখানা স্থাপন করেছে বলে জানা গেছে, যা গ্যাস সংযোগ পেলে উৎপাদন শুরু হবে। কারখানায় বিভিন্ন পুরুত্বের রঙিন ও মানসম্পন্ন গ্লাস তৈরি হবে, যা আন্তর্জাতিক বাজারে রফতানির উপযোগী। এ জন্য প্রায় এক হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলি জানিয়েছে, এখানে গ্যাসের জন্য প্রাথমিক চাহিদা দেড় লাখ কিউবিক মিটার নির্ধারিত হয়েছে। এখন গ্লাস কারখানা চালুর জন্য ৫০ হাজার কিউবিক মিটার গ্যাস প্রয়োজন হবে। বগুড়ার শিল্প ও ব্যবসায়ী মহলের অভিমত, পর্যাপ্ত শ্রমমান, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সুবিধা, স্বল্পমূল্যে শিল্প অবকাঠামো এবং উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা—এসব কারণে উদ্যোক্তাদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। সরাসরি রোড ও রেল যোগাযোগের সুবিধাও চলমান নির্মাণ কাজে সমর্থন করছে। এর পাশাপাশি দ্রুত এগিয়ে চলছে বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ, যা আরও সহজ করে তুলবে বাণিজ্য। এই সব সুবিধার বলীয়ান হয়ে বিভিন্ন শিল্প—যেমন ট্যানারি, রড-সিমেন্ট, মোটরবাইক ও গাড়ি নির্মাণ—কারখানা স্থাপনের স্বপ্ন দেখছেন উদ্যোক্তারা। প্রস্তাবিত এই প্রকল্পের জন্য বেশ কিছু দিন আগে শিল্প মন্ত্রণালয়ে আবেদন চাওয়া হয়েছে। গত বছর ৭ নভেম্বর মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দল এই এলাকাটি পরিদর্শন করে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছে, অচিরেই সরকারি অনুমোদন পাওয়া যাবে। এর ফলে, বগুড়ায় নতুন এই প্ল্যান্ট চালু হলে দ্রুত দেড় হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের সম্ভবনা দেখা দেয়। জমি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সহজভাবে নিশ্চিত হলে এখানকার বহুশিল্প প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হবে এবং হাজারো শ্রমিকের জন্য কর্মসংস্থান সৃজন হবে।

পোস্টটি শেয়ার করুন