বুধবার, ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৫, ৯ই পৌষ, ১৪৩২

সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের নিরাপত্তা ও হামলাকারীদের বিচারের দাবি জোটের

দৈনিক স্টার ও প্রথম আলো কার্যালয়ে হামলা ও ছায়ানটে ভাঙচুরের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন দেশি ও আন্তর্জাতিক ছয়টি মানবাধিকার ও আইনি সহায়তা সংস্থা। এ সংগঠনগুলো মনে করছে, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের ওপর এই ধরনের আঘাত অখণ্ডতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য অশনিসংকেত। তারা এক যৌথ বিবৃতিতে সোমবার (২২ ডিসেম্বর) এসব দাবি জানান। বিবৃতিতে বলা হয়, গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং এসব হামলার সাথে জড়িতদের দ্রুত বিচারে নিতে হবে। সংগঠনগুলো হলো—হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ), এক্সেস নাও, বাংলাদেশ লিগ্যাল অ্যাড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), ইন্টারন্যাশনাল ট্রুথ অ্যান্ড জাস্টিস প্রজেক্ট (আইটিজেপি), জার্নালিস্ট ফর ডেমোক্রেসি ইন শ্রীলঙ্কা (জেডিএস), ও টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট। তারা জানায়, ১৮ ডিসেম্বর দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম পুরোনো ও স্বনামধন্য মিডিয়া—প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। এই ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন নয় বরং স্বাধীন গণমাধ্যম, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ওপর পরিকল্পিত আঘাত। একই রাতে ময়মনসিংহে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে দীপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায়ো গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সংস্থাগুলো। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, জুলাইয়ে অভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা শরীফ ওসমান হাদীকে হত্যার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে, এই সময়ে রাজনৈতিক সংবেদনশীল অবস্থায় এমন হামলা গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণকে সংকুচিত করবে। হামলার সময় প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের সাংবাদিক ও কর্মীরা প্রাণের ঝুঁকিতে ছিলেন বলেও জানানো হয়, তারা আগুনের মধ্যে আটকা পড়েছিলেন এবং জীবন ঝুঁকিতে ছিল। প্রশাসনের দায়িত্বের প্রতি আস্থা না থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সংস্থাগুলো। এই পরিস্থিতিতে পত্রিকা দুটির প্রকাশনা বন্ধ থাকাকে নজিরবিহীন বলে মন্তব্য করা হয়। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা নিয়ে অনেক সমালোচনা রয়েছে। অতীতে ২০২৪ সালের জুলাই-অগাস্টে নিরাপত্তার অজুহাতে অতি বলপ্রয়োগের অনুশীলন করা হলেও, বর্তমান সরকার সহিংসতা ও হুমকি মোকাবেলায় অস্পষ্ট বা অক্ষম বলে মনে হচ্ছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলেন, সরকারের এই নিস্ত্রিয়তা পরিস্থিতিকে আরও সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে, তাদের বিরুদ্ধে সরকারের কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া উচিত। তবে, পলিটিক্যাল অনলাইন অপপ্রচার ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য (হেট স্পিচ) এর জন্য এই হামলা মূলত দায়ী। সামাজিক মাধ্যমে কিছু অনুসারী উসকানি দিচ্ছে এবং প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো এই ধরনের হেট স্পিচ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ। সরকার সাইবার সেফটি আইন সংস্কার করলে তবুও কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। সংস্থা six-point demands: সংস্থাগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ছয়টি মূল দাবি জানিয়েছে। এতে বলা হয়, দেশের সব গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের ওপর হুমকি হলে দ্রুত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রথম আলো, দ্য ডেইলি স্টার, ছায়ানটসহ অন্যান্য সাংবাদিক ও শিল্পীদের ওপর হামলার দ্রুত, স্বচ্ছ ও স্বাধীন তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিচার করতে হবে। অনলাইনে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও উসকানি রোধে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। নির্বাচনকালে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে অনলাইনে ও অফলাইনে, পাশাপাশি, সহিংসতা ও হুমকি প্রকাশ্যে ও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নিন্দা জানাতে হবে সরকারকে। ২০২৬ সালের নির্বাচন পর্যন্ত নিরাপদ পরিবেশে সাংবাদিকতা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাান্ড চালানোর দাবি জানায়। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের সুরক্ষায় আইন ও নীতিমালা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রস্তুত করতে হবে। সংস্থাগুলো বলছে, তারা বাংলাদেশের সাংবাদিক, শিল্পী ও সাধারণ জনগণের পক্ষে আছেন এবং স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার অধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

পোস্টটি শেয়ার করুন