শনিবার, ২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৫, ১২ই পৌষ, ১৪৩২

রাশিয়ার দাবি: ইউক্রেনের ৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা দখল

এক বছরে রাশিয়া দাবি করেছে যে, তারা প্রায় ৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা ইউক্রেনের কাছ থেকে নিয়ন্ত্রণে এনেছে। রাশিয়ার এই দাবি বর্তমানে বিশ্বের নজরকাড়া বিষয় হয়ে উঠেছে, কারণ এটি তারা ২০২৫ সালের মধ্যে ইউক্রেনে সামরিক সফলতা অর্জনের লক্ষ্যে জোরেশোরে প্রচার করছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই ব্যাপারে গত শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলতে গিয়ে বলেন, রুশ বাহিনী ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সিভেরস্ক ও উত্তরাঞ্চলীয় খারকিভের ভোভচানস্কসহ বেশ কিছু এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেলেছে। তিনি আরো দাবি করেন, দোনেৎস্কের লাইমান ও কোস্তিয়ানতিনিভকার অন্তত অর্ধেক এলাকাসহ জাপোরিঝিয়া অঞ্চলের হুলিয়াইপোল শহরেও রুশ সেনারা নিয়ন্ত্রণ করছে। এসব শহর যুদ্ধের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। তবে, ইউক্রেনের স্বতন্ত্র পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকরা রাশিয়ার এই দাবির সঙ্গে একমত নন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার (আইএসডব্লিউ) তাদের বিশ্লেষণে বলেছে, উপগ্রহ চিত্র ও অন্যান্য প্রকাশ্য প্রমাণের ভিত্তিতে তারা নিশ্চিত করতে পারেনি যে, রাশিয়া পুরোপুরি ওইসব শহর বা এলাকা দখল করতে সক্ষম হয়েছে। তারা উল্লেখ করেছে, হুলিয়াইপোলের মাত্র ৭.৩ শতাংশ এবং লাইমানের ২.৯ শতাংশ এলাকায় রুশ সেনাদের উপস্থিতি দেখা গেছে, যা মূলত অপ্রতিরোধ বা সাময়িক অনুপ্রবেশের অংশ। কোস্তিয়ানতিনিভকার ক্ষেত্রেও রুশ অগ্রগতি মাত্র ৫ শতাংশের বেশি নয় বলে জানিয়েছে সংস্থা। এছাড়া, রুশ ব্রিগেডের দাবির সঙ্গে তাদের তথ্যের সংঘাত রয়েছে; ব্লগাররা বলেছেন, লাইমানে সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ এবং কোস্তিয়ানতিনিভকারে ১১ শতাংশ এলাকায় রুশ নিয়ন্ত্রণ থাকতে পারে। অন্যদিকে, ক্রেমলিন খারকিভের কুপিয়ানস্ক ও দোনেৎস্কের পোক্রোভস্ক এলাকাগুলোর পুরোপুরি দখলের দাবি করে। তবে আইএসডব্লিউ’র হিসাব অনুযায়ী, খারকিভে রুশ নিয়ন্ত্রণ মাত্র ৭.২ শতাংশের কিছু বেশি, আর ইউক্রেনের সেনারা পোক্রোভস্কে ১৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা পুনরুদ্ধার করেছে। এই সময়ে রাশিয়ার সামরিক শীর্ষ কর্মকর্তা ভ্যালেরি গেরাসিমভ তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে দাবি করেছেন যে, ২০২৩ সালে রুশ সেনারা ইউক্রেনের ৬,৩০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিজেদের দখলে এনেছে। তবে, আইএসডব্লিউয়ের হিসাব অনুযায়ী, রাশিয়া প্রকৃতপক্ষে এই সময়ে দখল করেছে সর্বোচ্চ ৪,৯৮৪ বর্গকিলোমিটার, যেখান থেকে তারা ১৯৬টি বসতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। তবে, প্রেসিডেন্ট পুতিনের একটি দাবি যা সত্য বলে গণ্য হচ্ছে, তা হলো পূর্বাঞ্চলীয় শহর সিভেরস্কের দখল। এই পরিস্থিতিতে, যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন নতুন শান্তি আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে, তখনই রাশিয়া তাদের সাম্প্রতিক দাবি নিতে শুরু করেছে। গত দু সপ্তাহে এই আলোচনা জোরেশোরে চলছে। এক প্রতিবেদনে এটাই প্রকাশ করা হয় যে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র একটি চূড়ান্ত চুক্তি করার জন্য চায় এবং সে জন্য তাদের সাথে তারা সম্পূর্ণভাবে সহযোগিতা করছে। তবে, নতুন প্রকাশিত ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনায় দেখা যায়, সবচেয়ে স্পর্শকাতর বিষয়—ভূখণ্ড বিষয়—এ বিষয় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে এখনো একমত হয়নি। রাশিয়া দাবী করে, দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝিয়া ও খেরসন অঞ্চল পুরোপুরি ইউক্রেনের থেকে আউট করে দিতে হবে,ক্রিমিয়াও এতে অন্তর্ভুক্ত। তবে ইউক্রেন এই দাবি অগ্রাহ্য করেছে। ইউরোপীয় দেশগুলো বলছে, পূর্ণ যুদ্ধবিরতির পরে এই বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে একটি শীর্ষ বৈঠক করার আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে ভাগ্যবানভাবে ভূখণ্ড নিয়ে যৌথ অবস্থান নির্ধারিত হয়। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে ন্যাটো-মতো নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়ার কথা বলেছে, যার অর্থ, ভবিষ্যতে রাশিয়া আবার হামলা চালালে ন্যাটো ইউক্রেনের পক্ষে আঘাত হানতে পারে। এছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়ন জানিয়েছে, তারা শিগগিরই ইউক্রেনকে পূর্ণ সদস্যপদ দেবে, যা ইইউর পারস্পরিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও ন্যাটো সদস্যভুক্তির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই পরিকল্পনায় ইউক্রেনের সামরিক সক্ষমতা বজায় রাখার সুযোগ থাকবে এবং দখলকৃত এলাকাকে রাশিয়ার বলে স্বীকৃতি দেওয়ার শর্ত নেই। এর মাধ্যমে মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যে ভিন্নমত স্পষ্টly প্রকাশ পেয়েছে। ক্রেমলিনও জানিয়েছে, তারা ওয়াশিংটন ও কিয়েভের আলোচনায় থাকা ২০ দফা পরিকল্পনার বিষয়ে অবগত। মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, রাশিয়া শিগগিরই নিজেদের অবস্থান নির্ধারণ করবে এবং সাম্প্রতিক চ্যানেলগুলির মাধ্যমে যোগাযোগ বজায় রাখবে। এই পরিস্থিতিতে পুরো পরিস্থিতি কঠিন বিরোধমূলক এবং ভবিষ্যতের জন্য অগ্নিপরীক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন