ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বিন হাদি হত্যাকাণ্ডের তদন্তে বড় ধরনের অগ্রগতি হয়েছে বলে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) জানিয়েছে। ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত দুই সহযোগীকে ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপ্রকাশিত সূত্রের বরাতে জানা গেছে, মেঘালয় পুলিশ পুত্তি ও সামী নামে দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে।
পুলিশের ধারণা, তদন্ত ও গ্রেফতারের মাধ্যমে মূল পরিকল্পনাকারী ও তার সহযোগীদের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। পুলিশ জানায়, ফয়সাল ও আলমগীর নামে দুই অপরাধী অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে দেশের বাইরে পালিয়ে যান। ১২ ডিসেম্বর পল্টনে শরীফ ওসমান হাদি গুলি করে আহত হন। এরপর তারা সিএনজিতে আমিনবাজার যান, সেখান থেকে মানিকগঞ্জের কালামপুর, তারপর ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে পৌঁছান। সেখানে অপেক্ষায় ছিলেন ফিলিপ ও সঞ্জয় নামে দুই ব্যক্তি, যাঁরা তাঁদের সীমান্ত পার করে দেন। এরপর ভারতীয় নাগরিক পুত্তি ও সামী তাঁদের সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের ভেতরে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেন। পুলিশ মনে করছে, এই অপরাধীরা অবৈধ পথে সীমান্ত পাড়ি দিয়েছেন।
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের নয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের কাছ থেকে বিদেশি পিস্তল, ৫২ রাউন্ড গুলি, ম্যাগাজিন, একটি মোটরসাইকেল ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও, ৫৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মোট ২১৮ কোটি টাকার সন্দেহজনক চেক জব্দ করা হয়েছে, যা এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে বড় ধরনের অর্থায়নের ইঙ্গিত দেয়। অল্প সময়ের মধ্যে আদালতে চার্জশিট বা অভিযোগপত্র দাখিলের পরিকল্পনা আছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ৬ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন এবং ৪ জন সাক্ষ্য ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। হত্যাকাণ্ডের পেছনের কারণ সম্পর্কে পুলিশ জানায়, ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর শরীফ ওসমান হাদি বেশ সরব ছিলেন এবং নিজের এক নির্দিষ্ট আদর্শকে কেন্দ্র করে ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, তাঁর এই অবস্থান বা ৫ আগস্টের প্রেক্ষাপটে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তারাই এই সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের মূল নেপথ্যদল হতে পারে।
উল্লেখ্য, ১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজ শেষে শরীফ ওসমান হাদি নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘ ছয় দিন লড়াই করে ১৮ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। প্রথমে এটি হত্যাচেষ্টা হিসেবে মামলা হয়েছিল, কিন্তু হাদির মৃত্যুর পর আদালত এটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত করে। সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত বিচার নিশ্চিতের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।





