চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ১১ লাখ ১৬ হাজার ৭২৫ জন নারী-পুরুষ কর্মী বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন। এ সময়ে তারা দেশকে প্রায় ১৫৭৯ কোটি ১০ লাখ ডলার (১৫.৭৯ বিলিয়ন ডলার) রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা অর্থনীতির জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের এক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘জনশক্তি রপ্তানি একটি সম্ভাবনাময় খাত, এবং সরকার এটাকে একটি থ্রাস্ট সেক্টর হিসেবে ঘোষণা করেছে।’ তার মতে, বাস্তবসম্মত নীতির মাধ্যমে দেশে সঠিকভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে বিদেশে শ্রম বাজারে স্থান দেওয়ার কাজ চলছে।
সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বাংলাদেশি শ্রমিকরা ১৩ লাখ ৩ হাজার ৪৫৩ জন দেশের বাইরে গিয়েছেন। যেখানে ২০২৪ সালে এই সংখ্যা কমে ১০ লাখ ১১ হাজার ৯৬৯ জনে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জুলাই থেকে ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত এই অর্থবছরে প্রবাসীরা ১৫.৭৯১ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ১৩.৫৪৫ বিলিয়ন ডলার। এর মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে, প্রথমবারের মতো রেমিট্যান্স প্রবাহ ৩০ বিলিয়ন ডলারের বেশি, যা আগের বছরের তুলনায় ৬.৪ বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি। সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স পরিসংখ্যান ছিল ২০২০-২১ অর্থবছরে, যেখানে মোট যোগ হয়েছে ২৪.৮ বিলিয়ন ডলার।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, মালয়েশিয়া ও অন্য কিছু ঐতিহ্যবাহী গন্তব্যে কিছুটা বাধার মুখে পড়লেও, নতুন গন্তব্য খুঁজে পেতে বাংলাদেশির চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিস্থিতি এখন উন্নতির পথে।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, দেশের বিনিময় হার ও মানি লন্ডারিং পরিহার করতে কঠোর অভিযান আর অব্যাহত মানি ট্রান্সফার বৃদ্ধির ফলে রেমিট্যান্সের প্রবাহ গত বছর থেকেই বাড়ছে।
জনশক্তি ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ১১ মাসে বেশি করে কর্মীদের সউদি আরব, কাতার, ও সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে। সৌদি আরব গিয়েছেন ৭ লাখ ৪৪ হাজার ৬১৯ জন, কাতারে ১ লাখ ৬ হাজার ৮০৫ জন এবং সিঙ্গাপুরে ৬৯ হাজার ৪৯১ জন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে, শুধু কর্মী পাঠানো নয়, কর্মীদের অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করাও।’
সরকার নতুন কিছু গন্তব্য হিসেবে রাশিয়া, ব্রুনাই দারুসলাম ও পূর্ব ইউরোপে অনুসন্ধান চালাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রবাসীরা মোট ২৬.৮৮৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেন, প্রবাসীরা সাধারনত সাধারণ দৈনন্দিন খরচের পর আর যা সঞ্চিত থাকে, সেটাই মূলত দেশে পাঠান। সরকারের উচিত ভবিষ্যতে চাহিদা ভিত্তিক দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে বিনিয়োগ বাড়ানো, যাতে নার্স, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের চাহিদা দেশের বাইরে আরও বৃদ্ধি পাবে।
সরকার দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রশিক্ষণের কেন্দ্র চালু করছে, যেখানে ডিপ্লোমা কোর্সের মাধ্যমে শিপ বিল্ডিং, এয়ার কন্ডিশনিং, জেনারেল মেকানিক্স, ইলেকট্রিক্যাল মেশিন রক্ষণাবেক্ষণ, অটো ক্যাড ২ডি ও ৩ডি, ওয়েল্ডিং, ক্যাটারিংসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়াও, ভাষার প্রশিক্ষণ হিসেবে কোরিয়ান, আরবি, ক্যান্টনিজ ও জাপানি ভাষা শেখানো হচ্ছে।
বিদেশে তথ্যবহুল কর্মসংস্থানকে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার, যাতে দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠে।





