শুক্রবার, ২২শে আগস্ট, ২০২৫, ৭ই ভাদ্র, ১৪৩২

জুলাইয়ে সড়কে নিহতের সংখ্যা ৪১৮, মোটরসাইকেলই সবচেয়ে বেশি বিপদজনক

গত জুলাই মাসে দেশে মোট ৪৪৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এই দুর্ঘটনাগুলিতে মোট প্রাণ হারিয়েছেন ৪১৮ জন এবং আহত হয়েছেন ৮৫৬ জন। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়েছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়, যেখানে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০৯ জন, যা মোট নিহতের ২৬.০৮ শতাংশ।

বেসরকারি সংস্থা রোড সেফটি ফাউন্ডেশন মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, জুলাই মাসে ঘটে যাওয়া সড়ক দুর্ঘটনাগুলির বিস্তারিত বিশ্লেষণ ও তথ্যসমূহ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুলাইয়ে নিহতের মধ্যে নারী রয়েছেন ৭২ জন, যা মোট নিহতের ১৭.২২ শতাংশ, এবং শিশু রয়েছেন ৫৩ জন, যা ১২.৬৭ শতাংশ।

বিড়ম্বনা আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনাই সবচেয়ে মারাত্মক, যেখানে মোট ১৩১ ঘটনা ঘটেছিল এবং হতাহত হয়েছেন ১০৯ জন। এটি মোট নিহতের মধ্যে ২৬.০৮ শতাংশ। পাশাপাশি, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার সংখ্যা মোট দুর্ঘটনার প্রায় ২৯.৫৭ শতাংশ।

দুর্ঘটনায় অন্যান্যজন নিহতের মধ্যে রয়েছে ৯২ জন পথচারী, যা মোট নিহতের ২২ শতাংশ, যানবাহনের চালক ও সহকারী ৫৬ জন (১৩.৪০ শতাংশ), চারটি নৌ-দুর্ঘটনায় ৬ জন এবং ২১টি রেল ট্র্যাক দুর্ঘটনায় ১৮ জন নিহত হয়েছেন।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনটি মূলত ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও তাদের নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে।

যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী মিলে নিহতের সংখ্যা ১০৯। এর বাইরে বাসের যাত্রী ৪১ জন (৯.৮০ শতাংশ), ট্রাক-পিকআপের যাত্রী ৩০ জন (৭.১৭ শতাংশ), প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও অ্যাম্বুলেন্সের আরোহীরা ২০ জন (৪.৭৮ শতাংশ), থ্রি- হুইলার (সিএনজি, অটোরিকশা, অটোভ্যান) ১০৮ জন (২৫.৮৪ শতাংশ), স্থানীয় যানবাহন যেমন নসিমন, ভটভটি, পাখি ভ্যান, মাহিন্দ্র ১২ জন (২.৮৭ শতাংশ) এবং বাইসাইকেল বা রিকশার আরোহী ৬ জন (১.৪৪ শতাংশ) নিহত হয়েছেন।

দুর্ঘটনার সময়কাল নিয়ে বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ভোরে ৪.৯৬ শতাংশ, সকাল ২৯.৫৭ শতাংশ, দুপুরে ২১.৮৯ শতাংশ, বিকালে ১৭.১৫ শতাংশ, সন্ধ্যায় ১১.০৬ শতাংশ এবং রাতে ১৫.৩৪ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটে।

সর্বোচ্চ দুর্ঘটনা হয়েছে ঢাকায়, যেখানে মোট ২৬.৪১ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে। Mমধ্যে ঢাকায় ১১৭টি দুর্ঘটনায় ১০৫ জন নিহত এবং শহরজুড়ে ২৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকা জেলায় এই দুর্ঘটনাগুলির মধ্যে ৪৭টি ঘটেছে, যেখানে ৩৪ জন মারা গেছেন। রাজধানীতে ২৬টি দুর্ঘটনায় ১৯ জন নিহত এবং ৩৮ জন আহত হয়েছেন।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের মতে, সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণসমূহ হলো: ১. ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, ২. খারাপ সড়ক অবস্থা, ৩. বেপরোয়া গতি, ৪. চালকদের অদক্ষতা, মানসিক ও শারীরিক অসুস্থতা, ৫. নির্দিষ্ট বেতন ও কর্মঘণ্টার অভাব, ৬. মহাসড়কে ধীর গতির যানবাহনের চলাচল, ৭. তরুণদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, ৮. ট্রাফিক আইন না জানা ও মানার প্রবণতা, ৯. দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, ১০. বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতি এবং ১১. গণপরিবহন ক্ষেত্রে চাঁদাবাজি।

এই দুর্ঘটনা কমানোর জন্য রোড সেফটি ফাউন্ডেশন বেশ কিছু সুপারিশ উপস্থাপন করেছে, যেমন- দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি, চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্ধারণ, বিআরটিএর সক্ষমতা উন্নয়ন, পরিবহন মালিকা, শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের ট্রাফিক আইনের কঠোর বাস্তবায়ন, মহাসড়কে আলাদা পার্শ্ব রাস্তা, রোড ডিভাইডার নির্মাণ, চাঁদাবাজি বন্ধ, সড়ক ও রেল, নৌপথের সংস্কার, টেকসই পরিবহননীতি এবং অধিক কার্যকর ট্রাফিক আইন প্রয়োগ।

পোস্টটি শেয়ার করুন