শুক্রবার, ২২শে আগস্ট, ২০২৫, ৭ই ভাদ্র, ১৪৩২

নির্বাচনের আগেই সব জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগের প্রস্তুতি সরকারের

আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকার খুব শিগগিরই দেশের সব জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগের প্রস্তুতি নিচ্ছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, চলতি সেপ্টেম্বরের মধ্যে নতুন ডিসিদের নিয়োগ সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে নতুন ফিটলিস্ট তৈরির কাজ বেশ এগিয়ে গেছে, যার মধ্যে সিলেট জেলায় নতুন ডিসির নিয়োগও সম্পন্ন হয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে, এবার ডিসি নিয়োগে জড়িত কোনো রাজনৈতিক সুবিধাভোগী বা বিতর্কিত কর্মকর্তাকে স্থান দেওয়া হবে না। যদি কেউ ছলচাতুরী বা তথ্য গোপন করে ডিসি পদে নিয়োগ পান এবং পরে সেটা প্রকাশ পায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সিলেটে সম্প্রতি নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে মো. সারওয়ার আলমের নাম ঘোষণা হয়েছে, তিনি বর্তমানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা ও অধ্যাপক আসিফ নজরুলের উপসচিব (পিএস) হিসেবে কর্মরত আছেন। এ নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জনবল ফিটলিস্ট তৈরির কাজ গত জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে। এর মধ্যে ছয় ধাপে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৫তম ও ২৭তম ব্যাচের ২৬৯ জন উপসচিবের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়, এর থেকে অর্ধশতাধিক কর্মকর্তাকে নির্বাচিত করা হয়েছে। বর্তমানে ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মৌখিক পরীক্ষাও চলমান।

বর্তমানে ২৪তম ব্যাচের ২৬ জন, ২৫তম ব্যাচের ২৫ জন এবং ২৭তম ব্যাচের ১২ জন কর্মকর্তা ডিসি পদে রয়েছেন। তবে, ২৪তম ব্যাচের ২১ জন কর্মকর্তা গত মার্চে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়ার পরও তাদের বর্তমান কাজ থেকে সরানো সম্ভব হয়নি।

এর আগে, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে ১০৮ কর্মকর্তার ফিটলিস্ট থেকে ৬১ জেলায় ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়, যা বিভিন্ন বিতর্কের সৃষ্টি করে। অনেক কর্মকর্তা নিজেদের অপ্রতুল বা বঞ্চিত হিসেবে মনে করে মন্ত্রণালয়ে হৈচৈ সৃষ্টি করেন। মারামারি, হাতাহাতি-সহ নানা অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটলেও প্রশাসনের এর জন্য সমালোচনা হয়।

তার পাশাপাশি, সরকারের আমলে সুবিধা পাওয়া অনেক কর্মকর্তাও বর্তমানে নিয়মিত ডিসি পদের নিয়োগ পেয়েছেন, যা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এবার সরকার আরও সচেতন হয়ে এই ধরনের দুর্বলতা এড়ানোর চেষ্টা করছে।

শুধু ডিসি নিয়োগ নয়, বর্তমানে বেশ কয়েকটি বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ে সচিব পদে উপযুক্ত কর্মকর্তা পাওয়া যায়নি, আর তার পরিবর্তে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নিয়োগ চলছে। কর্মকর্তাদের অভিমত, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নিয়োগের এই প্রবণতা বর্তমান ডিজিটাল যুগের জন্য ক্ষতিকর, কারণ তারা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে অক্ষম, যা প্রশাসনে শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণ হচ্ছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. এরফানুল হক বলেন, ‘ডিসি নিয়োগের প্রক্রিয়া সমপ্রতি চলছে। কবে নাগাদ নিয়োগ সম্পন্ন হবে, তা যাচাই করবে নিয়োগবিষয়ক কমিটি। আমরা আশাবাদী, শীঘ্রই এই কাজ শেষ হবে।’

সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমান জানান, ডিসি নিয়োগের জন্য ফিটলিস্ট অনুযায়ী প্রার্থী নির্বাচন হবে, যাতে নির্বাচনকালে কোনো প্রশ্ন উঠতে না পারে।

প্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক সচিব এ কে এম আব্দুল আউয়াল মজুমদার মন্তব্য করেন, ‘১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের মধ্যবর্তী সরকারগুলোকে এ ধরনের অরাজক পরিস্থিতি দেখেনি। বর্তমান প্রশাসনের দুর্বলতা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে হবে। একটি সত্যিকারের সৎ, দক্ষ ও পেশাদার আমলাতন্ত্র ছাড়া রাষ্ট্রের উন্নয়ন সম্ভব নয়। এখনই সময়, সরকারের উচিত যোগ্য ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিয়ে প্রশাসনের প্রাণসঞ্চার করা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমলাতন্ত্রের ওপরই জাতির ভবিষ্যৎ। তাই এখনই সময় যেন প্রশাসনের প্রাণ ফিরে আসে। মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও ডিসি পদে যোগ্য ও দক্ষ ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে হবে।’

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, যুগ্ম সচিব ও অন্যান্য উচ্চপদে নিয়োগ, বদলি ও শৃঙ্খলা বিষয়ক সিদ্ধান্তের জন্য চারজন উপদেষ্টা, মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং জনপ্রশাসন সচিবের নেতৃত্বে একটি ‘জনপ্রশাসনবিষয়ক কমিটি’ গঠন করা হয়েছে, যারা এই সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

পোস্টটি শেয়ার করুন