২০২৪ সালের শেষ নাগাদ বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে ঝুঁকিপূর্ণ বা দুর্দশাগ্রস্ত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ২ লাখ ৮১ হাজার কোটি বেশি। ২০২৩ সালের শেষে এই পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সদ্য প্রকাশিত ‘ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট ২০২৪’ এ এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২৩ সালের শেষে এই ধরনের ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা, যা এক বছরে ৪৪.২১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি মোট বিতরণকৃত ঋণের প্রায় অর্ধেক, যা দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য গভীর সতর্কবার্তা। আইএমএফের সংজ্ঞা অনুযায়ী, খেলাপি, পুনঃতফসিলকৃত এবং অবলোপনকৃত ঋণসমূহকে সম্মিলিতভাবে ‘দুর্দশাগ্রস্ত ঋণের’ ক্যटेগরি হিসেবে ধরা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা, পুনঃতফসিলকৃত ঋণ ছিল ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৬৬১ কোটি টাকা এবং রাইট-অফকরা ঋণের পরিমাণ ছিল ৬২ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা। বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক প্রভাব, দুর্নীতি এবং তদবিরের মাধ্যমে দেওয়া ঋণ এখন খেলাপিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। আগে এসব তথ্য গোপন থাকলেও, এখন আইএমএফের চাপের মুখে বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিতভাবে এসব প্রকাশ করছে। প্রতিবেদনে আরও উঠে এসেছে, ২০২৪ সালে দেশের ব্যাংক খাত চরম চাপের মুখে পড়েছে, বিশেষ করে মূলধন পর্যাপ্ততায়। সিআরএআর (ক্যাপিটাল টু রিস্ক-ওয়েইটেড অ্যাসেট রেশিও) মাত্র ৩.০৮ শতাংশে নেমে এসেছে, যেখানে মানে কমপক্ষে ১০ শতাংশ হওয়া প্রয়োজন। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক ও কিছু ইসলামী ব্যাংকের। মূলধন অনুপাত ও লিভারেজ অনুপাত যথাক্রমে ০.৩০ শতাংশে নেমে এসেছে, যা ব্যাংক খাতের কাঠামোগত দুর্বলতা এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার অভাবকে প্রকাশ করে। তবে, ব্যাংক খাতের তারল্য পরিস্থিতি এখনো তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে। অ্যাডভান্স-ডিপোজিট রেশিও (এডিআর) ৮১.৫৫ শতাংশে পৌঁছেছে, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত সীমার মধ্যে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, দেশের আর্থিক খাত সামগ্রিকভাবে স্থিতিশীল থাকলেও, খেলাপি ঋণ, বৈদেশিক মুদ্রার চাপ এবং সুশাসনের অভাব এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এগুলো মোকাবেলায় সময়োপযোগী নীতিমালা, কঠোর তদারকি ও প্রযুক্তিনির্ভর ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য।
