দেশে ‘একাত্তরকে ভুলিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে’ বলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের সম্মানে আয়োজিত এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এ বক্তব্য উচ্চারণ করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজ আমি ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের কথা বারবার স্মরণ করতে চাই। 1971 সালে আমাকে স্বদেশ দিয়েছিল, ভূখণ্ড দিয়েছে, স্বাধীন সত্ত্বা দিয়েছে। এ জন্যই আজ আমি টিকে আছি, অস্তিত্বের খোঁজে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমি বিশেষভাবে স্মরণ করতে চাই ২০২৪ সালে জুলাই-আগস্টের শহীদদের, যারা আমাদের জন্য গণতন্ত্রের স্বপ্ন দেখিয়েছে। এই দুটো বিষয়ই আমাদের হৃদয়ে বজায় রাখতে হবে। আজ একটা ধীরে ধীরে চলমান প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে—একাত্তরকে ভুলিয়ে দেওয়ার জন্য। এ ধরনের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে। ২৪ জুলাইয়ের মুক্তিযুদ্ধের সত্যকে আসলে কেউ মুছে ফেলতে পারবে না। ইতিহাসে এই সত্যের কোনো বিকল্প নেই। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা—তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ঘোষণা দিয়েছেন।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘এখন কিছু নতুন ষড়যন্ত্র উঠে এসেছে, যেখানে বলা হচ্ছে যে, বাংলাদেশের ইসলামি ও উগ্রবাদীরা মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। আমরা এই উগ্রবাদকে যেন দমনে দেরি না করি, কারণ এর মাধ্যমে আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতি আরও বিপদগ্রস্ত হবে। আমাদের সকলের উচিত বিভেদ ও বিভাজনের রাজনীতি পরিহার করে, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা আর উন্নতির জন্য একসঙ্গে কাজ করা।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গত ১৫ বছরে যারা আমাদের ভুল বুঝিয়ে, ভোটের মাধ্যমে ভোট কেন্দ্র দখল করে দেশ শাসন করেছে, তারা আমাদের বন্ধু হিসেবে দেখেনি। তারা আমাদের উপরে অত্যাচার ও নির্যাতন চালিয়েছে, দেশের সকল সম্পদ লুটপাঠ করে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি কিছু দিন আগে ব্যাংককে গিয়েছিলাম, যেখানে শুনেছি দেশের অভিজাত এলাকা গুলোতে বাড়ি ভাড়ার উপদ্রব বেড়ে গেছে। এই বাড়ি আর গাড়িগুলোর দাম কোনোটাই ২ বা ৩ কোটি টাকার কম নয়। এসব সম্পদের উৎস কি? প্রকৃতপক্ষে, এই সম্পদগুলো দেশের সম্পদকে লুটপাট করে পাচার করা হয়েছে।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘আমরা সবাই জানি, আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামো ভেঙে দিয়েছে। দেশের সম্পদও লুটপাট করে বিদেশে পাঠানো হয়েছে—প্রায় ৮৮ লাখ কোটি টাকা থেকে শুরু করে যাবতীয় অর্থ সম্পদ দেশের বাইরে চলে গেছে। এখন দেশের অর্থনীতির অবস্থা খুবই দুর্দশাগ্রস্ত। কেউ ভাবতে পারেনি, এমন অপ্রতিরোধ্য অর্থনৈতিক বিপর্যয় হবে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের অর্থনীতি এখন অনেকটাই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। দেশের মানুষ এখন আতঙ্কে থাকলেও, দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত সকলেই।’