গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে ইসরায়েলে ব্যাপক বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটেছে। এ প্রতিবাদ জানাতে দেশের বিভিন্ন শহরে মানুষের সমাগম হয়েছে, যেখানে তারা গাজায় চলমান সামরিক অভিযান দ্রুত বন্ধের ও হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। খবর বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই বিক্ষোভে জিম্মির পরিবারের সদস্যরা সহ সাধারণ মানুষ সবাই অংশ নিচ্ছেন। হোস্টেজেস অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিস ফোরাম নামের একটি গ্রুপ দীর্ঘ দিন ধরে জিম্মির মুক্তির জন্য সরকারের অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে। তারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি অনুরোধ করেছেন যেন তিনি যুদ্ধবিরতি চুক্তি চূড়ান্ত করতে সাহায্য করেন এবং হামাসের বন্দি থাকা জিম্মিদের মুক্তিতে ভূমিকা রাখেন। ধারণা করা হচ্ছে, হামাস এখনো জীবিত ২০ জন জিম্মিকে ধারণ করে রাখছে, যাদের মধ্যে কিছুজনের জীবিত থাকার সম্ভাবনা অব্যাহত। এই সময়ে, ইসরায়েলি বাহিনী দেশের বিভিন্ন মহাসড়ক অবরোধ করে রাখায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ইয়াকুম জংশনের কাছে কোস্টাল হাইওয়ে রাস্তায় বিক্ষোভকারীরা আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে রাস্তাকে পুরোপুরি বন্ধ করে দেন, যার ফলে অসংখ্য গাড়ির দীর্ঘ সারি দেখা যাচ্ছে ও সাধারণ পথচারীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। পুলিশ এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা করছে। অন্যদিকে, গাজার পরিস্থিতি আরও মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। গত সোমবার গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ৮৬ জন নিহত হন, যার মধ্যে পাঁচজন সাংবাদিক ও চারজন স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন। এই সহিংসতায় আহতের সংখ্যাও বেড়েছে, যা এখন পর্যন্ত মোট ৪৯২ জন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিহতের মধ্যে ৫৮ জন ইসরায়েলি গোলার আঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন, আর বাকি ২৮ জন খাদ্য সংগ্রহের সময় উর্ধ্বতন সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে গাজার চারপাশে ধ্বংসস্তূপের নিচে অসংখ্য মানুষ আটকা পড়েছেন এবং উদ্ধারকর্মীরা পর্যাপ্ত সরঞ্জাম না থাকার কারণে তাদের উদ্ধার করতে পারছেন না। এখন পর্যন্ত গাজায় নিহতের সংখ্যা ৬২,৭৪৪ এবং আহত হয়েছে এক লাখ ৫৮ হাজারের বেশি। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, গত মে মাসের শেষ থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ ও খাদ্য সরবরাহের জন্য যেসব মানুষ গাজায় গিয়েছিলেন, তাদের ওপরে হামলা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে ২,১২৩ জন নিহত ও ১৫,৬১৫ জন আহত হয়েছেন। এই পরিস্থিতির মধ্যে চলমান যুদ্ধের ইতিহাসে, ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলার ফলে এক হাজার ২০০ মানুষ নিহত হন এবং ২৫১ জন জিম্মি হন। এরপর ইসরায়েল সামরিক অভিযান চালায় এবং দীর্ঘ ১৫ মাসের বেশি সময় যুদ্ধ চলার পরে, ২০২৪ জানুয়ারির মধ্যে তারা যুদ্ধবিরতিতে বাধ্য হয়। তবে, বেশিরভাগ জিম্মি এখনো জীবিত আছেন বলে ধারণা এবং তাদের উদ্ধার করতে সামরিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন ও জাতিসংঘ বারবার ইসরায়েলে সামরিক অভিযান বন্ধের দাবি জানিয়েছে। অন্য দিকে, প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাসকে সম্পূর্ণ দুর্বল ও অকার্যকর না করা ও জিম্মিদের মুক্ত না করা পর্যন্ত এই অভিযান চালিয়ে যাবেন। এই পরিস্থিতিতে, ইসরায়েলে চলমান বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
