বুধবার, ১০ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২৬শে ভাদ্র, ১৪৩২

ব্যাংক খাতে সংস্কারেই ঢালাও অর্থপাচার বন্ধের সফলতা: টিআইবি

ব্যাংকখাতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের মাধ্যমে ঢালাও অর্থপাচার somewhat কমে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন। এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজিত হয় ঢাকায় আসা ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁর বাংলাদেশ সফর উপলক্ষে, যিনি টিআইর আন্তর্জাতিক পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারপারসন।

তিনি বলেন, কিছুটা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ায় অর্থপাচার কমেছে। বিশেষ করে ব্যাংক খাত সেই গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে পরিচিত যেখানে প্রচুর অর্থপাচার হয়েছিল। ব্যাংকখাতে কিছু সংস্কারের ফলে ঢালাওভাবে অর্থপাচার ও জালিয়াতির সুযোগ কমে গেছে। এই প্রক্রিয়ায় জড়িত অনেকের বিচার হয়েছে বা তারা দেশের বাইরে আছে। ফলে এখন এদের ভূমিকা খুবই সীমিত। তবে, তিনি বলেন, নতুন অ্যাক্টররা আসছে কি না, সেটি এখনও নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়।

অর্থপাচার কমাতে আরও বেশি সংস্কার প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, অনেক পরিবর্তন এসেছে এই খাতে, তবে এখনও বেশ কিছু শৃঙ্খলা ও নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেয়া দরকার। তিনি জোর দিয়ে বলেন, যেখানে আগে বিশাল পরিমাণ অর্থপাচার হতো, সেখানে এখন কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আসছে, যা বড় অঙ্কের অর্থপাচার রোধে গুরুত্বপূর্ণ।

অর্থপাচার প্রতিরোধে প্রচেষ্টার জন্য ব্যবহার হওয়া অর্থের চেয়ে আরও বেশি অর্থ ও উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের মাধ্যমে বড় পরিমাণ অর্থপাচার হতো উল্লেখ করে তিনি জানিয়ে দেন, হুন্ডি ও জাল চালান ব্যবস্থার মাধ্যমে টাকা আসা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে, মিস ইনভয়েসিং বা আমদানি-রপ্তানি চালানের জালিয়াতি মাধ্যমে অর্থপাচার পুরোপুরি বন্ধ হয়নি বলে স্বীকার করেন।

দুদক ও অর্থপাচার নিয়ন্ত্রণে থাকা অন্যান্য সংস্থার সংস্কার বাস্তবায়ন হলে এই সমস্যা কমে যাবে বলে আশ্বাস দেন ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, অর্থপাচার রোধে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত।

এছাড়া সময় তিনি গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় গুরুত্ব দিয়ে বলেন, সাংবাদিকতা ছাড়া গণতন্ত্র টিকে থাকতে পারে না। গণতন্ত্র না থাকলে ক্ষমতার অপব্যবহারও দুঃসাধ্য। তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন, বাংলাদেশের যুবসমাজ ও সাধারণ মানুষের গণআন্দোলন এসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্তিশালী। বিশেষ করে তরুণ, নারী ও শ্রমজীবী সাধারণ মানুষ দুর্নীতির স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে।

তাঁর মতে, সারাবিশ্বে যেখানে স্বৈরতন্ত্রের উত্থান ঘটছে, সেখানে বাংলাদেশ তার উল্টো মডেল দেখাচ্ছে। এই প্রক্রিয়ার জন্য আন্তর্জাতিক নাগরিক সমাজ বাংলাদেশকে সম্মান দেখাচ্ছে। তিনি বলেন, দেশের সংস্কার প্রক্রিয়া টেকসই করতে হবে, সরকারকে ক্ষমতার প্রয়োগে গভীর পরিবর্তন আনতে হবে। তিনি আশাবাদী যে, নাগরিক সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ এই পথচলা সফল করবে।

স্বৈরশাসনের অবসান হওয়ার পর অনেকের প্রশ্ন ওঠে কি, টিআই এর কার্যক্রম বা প্রাসঙ্গিকতা বাংলাদেশের জন্য ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে কি না। এর জবাবে তিনি বলেন, না, একেবারে নয়। দুর্নীতির সমস্যা এখনও রয়েছে, যা পৃথিবীর অনেক দেশেই দেখা যায়। যেখানে ক্ষমতা থাকবে, সেখানে ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রলোভন থাকবেই। তাই, টিআই-এর কাজ কখনোই শেষ হয়ে যাবে না।

পোস্টটি শেয়ার করুন