নেপাল ফের সংকটের মুখে পড়েছে। সমাজের বিভিন্ন অংশের অসন্তুষ্টি, বিশেষ করে গত দুই দিন ধরে চলমান আন্দোলনের চাপে দেশটির পুলিশ গুলিতে কমপক্ষে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে প্রতিরক্ষা প্রধান কেপি শর্মা অলি নিজ পদত্যাগের ঘোষণা দেন। আন্দোলনকারীরা এখন নতুন সরকারের গঠনের দাবি তুলেছেন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মাত্র ১৭ বছরে নেপালে ১৩ বার সরকার পরিবর্তন হয়েছে, যা দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার দিক থেকে খুবই উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরে।
বিশ্লেষকদের বক্তব্য, এই অস্থিরতা এখন সবচেয়ে ভয়াবহ এবং সহিংস। ২০০৬ সালে গণআন্দোলনের সময়ও এমন পরিস্থিতি দেখা গিয়েছিল, যখন জনগণের তীব্র আন্দোলনে শেষ রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহকে নির্বাহী ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হতে হয়েছিল। ওই আন্দোলনে কমপক্ষে ১৮ জন নিহত হয়েছিলেন। এরপর ২০০৮ সালে সংসদীয় নির্বাচন শেষে নেপালের রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করে প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা হয়। তবে এর পর থেকে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা কখনও ফিরে আসেনি। ২০০৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত, অর্থাৎ দুই দশকে, ১৩ বার সরকারের পরিবর্তন ঘটেছে। এই ধারাবাহিক পরিবর্তনের ফলে দেশটির নাগরিকদের মধ্যে হতাশা বেড়েই চলেছে।
কাঠমান্ডুর এক বিক্ষোভকারী বলেন, আমাদের বিশ্বাস ছিল যে রাজতন্ত্র বিলুপ্তির পর দেশ স্থিতিশীল হয়ে উঠবে। কিন্তু বছর ঘুরে ঘুরে শুধু দুর্নীতি, দলবাজি ও ক্ষমতার লড়াই বেশি হচ্ছে। এদিকে, রাজতন্ত্র পুনর্বহালের দাবি এখনো বিভিন্ন অংশের মধ্যে জোরালো। চলতি বছরের মার্চ মাসে কাঠমান্ডুতে একটি কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া জনতা পুলিশসহ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে, এতে দুজনের মৃত্যুও হয়।
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অলি কর্তৃক পদত্যাগ করলেও রাজনৈতিক সংকটের সমাধান সহজ নয়। আন্দোলনকারীরা সরকারের বিলুপ্তি দাবি করলে পরিস্থিতি আরও জটিল ও অনিশ্চয়ের মধ্যে পড়তে পারে। বিশ্লেষকদের মতে, দ্রুত একটা স্থিতিশীল নেতৃত্ব ও কার্যকর রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে, নেপাল আবারও দীর্ঘমেয়াদি অস্থিতিশীলতার দিকে এগিয়ে যেতে পারে।