সোমবার, ১৫ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৩১শে ভাদ্র, ১৪৩২

শ্রীমঙ্গলে সম্ভাবনাময় গুলমরিচের চাষ

শ্রীমঙ্গলের সূর্যোদয় এলাকার চা বাগান ও পার্বত্য অঞ্চলে গুলমরিচের চাষের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। খ্যাতি রয়েছে এই অঞ্চলটির চা শিল্পের জন্য, তবে এখানকার মসলা জাতীয় এই ফসলটি এখনো বাণিজ্যিক পর্যায়ে পৌঁছায়নি। স্থানীয় চা-বাগান এবং কিছু পাহাড়ি জমিতে বিচ্ছিন্নভাবে গুলমরিচের গাছ দেখা গেলেও, এগুলি মূলত নিজেদের ব্যবহার বা সীমিত বিক্রির জন্য চাষ করা হয়। তবে কৃষি কর্মকর্তাদের মতে, সঠিক পরিকল্পনা ও উদ্যোগের মাধ্যমে শ্রীমঙ্গলে গুলমরিচের চাষ লাভজনক হতে পারে। তবে এ জন্য দরকার পর্যাপ্ত বিনিয়োগ ও পরিকল্পনা।

শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, পান গাছের মতো দেখতে বড় বড় গুলমরিচের গাছগুলো ঝুলে রয়েছে। হরিনছড়া চা বাগানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুলমরিচের গাছ দেখা গেছে, যেখানে প্রায় ২৫টির মতো গাছ রয়েছে। এখানকার সবুজ পাতার মাঝে লাল গুলমরিচের ঝুরির দৃশ্য পর্যটকদেরও আকর্ষণ করে। উপজেলার রাধানগর ও মহাজেরাবাদ এলাকায় কিছু গাছ রয়েছে, যেখানে কেউ সখ করে ফলগুলো সংগ্রহ করে বা গাছেই নষ্ট করে দেয়।

যদিও স্থানীয় পর্যায়ে গুলমরিচের সম্ভাবনা রয়েছে, তবে এর বাণিজ্যিক বিকাশ এখনো ততটা হয়নি, কারণ বিনিয়োগ ও পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। কৃষি বিভাগের সঙ্গে মিলেমিশে উদ্যোগ নিলে, এই ফসল শ্রীমঙ্গলের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে পারে।

হরিনছড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক বিকাশ সিংহ বলেন, ‘আমাদের চা বাগানের বেশ কিছু গুলমরিচের গাছ রয়েছে, পড়ে ২০ বছর থেকে বেশি। শ্রমিকেরা এদের দেখাশোনা করে থাকেন, ফলনও হয়, তবে বাণিজ্যিকভাবে সংগ্রহ হয় না। গাছগুলো বড় হয়ে বেশ সুন্দর দেখায়।’

পাইকারি মসলার দোকান মেসার্স মানিক দেব-এর পরিচালক তাপস দেব বলেন, ‘আমরা কম সংখ্যক গুলমরিচ কিনি, বেশিরভাগই বিদেশ থেকে আমদানি। যদি দেশে এর চাষ ব্যাপক হতো, তাহলে আমাদের দাম কমত। বর্তমানে প্রতি কেজি কালো গুলমরিচের দাম ১২০০ টাকা আর সাদা গুলমরিচের ১৬০০ টাকা।’

শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা উজ্জ্বল সূত্রধর বলেন, ‘গুলমরিচ চাষের জন্য কাটিং বা বাইন সংগ্রহ করে মাটিতে লাগাতে হয়। আড়াই থেকে তিন বছর পর ফলন শুরু হয়। দুই বছর বয়সে গাছ থেকে ভালো ফলন পাওয়া যায়, যা প্রক্রিয়াজাত করে বাজারজাত করা যায়।’ তিনি আরও জানান, ‘শ্রীমঙ্গলের পাহাড়ি জমিগুলোর মাটি গুলমরিচের জন্য উপযোগী। ইতোমধ্যে দুই হেক্টর জমিতে বিচ্ছিন্নভাবে চাষ শুরু হয়েছে। মহাজেরাবাদসহ আরও দশটি স্থানে চারা রোপণ করা হয়েছে। যদি কেউ চাষে আগ্রহী হন, তবে তারা আমাদের কাছ থেকে পরামর্শ ও সহযোগিতা পেতে পারেন।’

পোস্টটি শেয়ার করুন