বৃহস্পতিবার, ১৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৩রা আশ্বিন, ১৪৩২

শিক্ষার্থীরা বলে ‘রাজাকারের নাতিপুতি’, অপমানিত বোধ করেছিলেন ছাত্ররা

তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ এবং ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ বলে আখ্যায়িত করার কারণে সারাদেশের ছাত্রছাত্রীরা গভীর অপমানবোধ করেছিলেন বলে উল্লেখ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি নিজস্ব জবানবন্দিতে জানান, জুলাই মাসে গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনার তদন্তে ওই সময়ের মূল অভিযুক্তরা—শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন—অভিযোগের মুখে পড়েন। নাহিদ ইসলাম ৪৭তম সাক্ষী হিসেবে গতকাল বুধবার তার জবানবন্দিতে এসব বিষয় উত্থাপন করেন। অন্যদিকে, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে এই মামলায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন এবং তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজিরও করা হয়েছে। আগামীকাল, বৃহস্পতিবার আবারও তার জবানবন্দি দেওয়ার কথা আছে।

জবানবন্দিতে নাহিদ ইসলাম বললেন, শেখ হাসিনা ২০২২ সালের ১৪ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী ছাত্রদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ এবং ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ হিসেবে আখ্যায়িত করে, কোটাপ্রথার পক্ষে অবস্থান নেন। এই বক্তব্যের মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের উপর আক্রমণের বৈধতা সম্ভবত দেওয়া হয়। তিনি বলেন, আন্দোলনরত ছাত্ররা যখন কোনো ন্যায্য আন্দোলন করতেন, তখন তাদেরকে ‘রাজাকারের বাচ্চা’ অভিহিত করে আন্দোলনের ন্যায্যতা নস্যাৎ করা হতো। এর ফলে, সারাদেশের ছাত্রছাত্রীরা অপমানিত বোধ করেন। সেই রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিবাদ জানিয়ে রাস্তায় নামেন।

নাহিদ আরও বলেন, ১৭ জুলাই ডিজিএফআই তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করার জন্য চাপ দেয় এবং সরকারের আলোচনায় বসার প্রস্তাব রাখে। তার ভাষ্য, এই সময়ে শাহবাগ থানায় মামলা দেওয়া হয় এবং সারাদেশে এর মতো বাধা সৃষ্টি করা হয়। তথাপি, এসব বাধাকে অতিক্রম করে তারা আন্দোলন চালিয়ে যান।

তিনি বলেন, ১৭ জুলাই রাতে দেশব্যাপী ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। পরের দিন, অর্থাৎ ১৮ জুলাই, দেশের ছাত্রজনতা রাস্তায় নেমে আসে, বিশেষ করে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসার ছাত্ররা ব্যাপক প্রতিরোধ গড়ে তোলে। আন্দোলনের নেতা, শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আত্মগোপনে যান। সেই দিন সারাদেশে অনেক ছাত্র-জনতা আহত হয় এবং কিছুজন নিহতও হন। একই দিন রাতে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

আরো বলেছেন, ১৯ জুলাই সবাই বুঝতে পারেন যে সরকার সম্পূর্ণ ইলেকট্রনিক মিডিয়া নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে, ফলে আন্দোলনের ঘটনাপ্রবাহ ও নিহতের খবর মিডিয়ায় প্রচার হয়নি। এই ঘটনার ফলে, গণমাধ্যমের মাধ্যমে সত্যতা জানানো কঠিন হয়ে পড়ে।

পোস্টটি শেয়ার করুন