বৃহস্পতিবার, ১৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৩রা আশ্বিন, ১৪৩২

দিল্লির বায়ুদূষণে ঐতিহাসিক লালকেল্লা হয় কালো

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির অসহনীয় বায়ুদূষণের কারণে শহরের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহাসিক লালকেল্লার দেওয়ালে গভীর কালো আবরণ বা স্তর সৃষ্টি হচ্ছে। এই স্তরটি মূলত রাসায়নিক বিক্রিয়া ও ধুলিকণার জমে থাকা ফলেই তৈরি হচ্ছে বলে গবেষণায় দেখা গেছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, লালবাহারি পাথরের এই স্থাপনার দেওয়ালে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে জমে থাকা স্তরটির পুরুত্ব পৌঁছেছে ০.০৫ থেকে ০.৫ মিলিমিটার পর্যন্ত। দ্রুত তাদের সংস্কার ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা না নিলে এটি স্থাপনার সূক্ষ্ম নকশা, খোদাই, এবং গম্বুজ, খানিকটা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এটি হলো এই গুরুত্বপূর্ণ ভবনটির বায়ুদূষণের প্রভাব নিয়ে করা প্রথম পূর্ণাঙ্গ গবেষণা।

বিশ্বের শীর্ষ দূষিত শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম দিল্লি, শীতকালীন মরসুমে বায়ুর মান আরও খারাপ হয়ে যায়। সংরক্ষণবিদরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে, দুষণ এখানকার ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা এবং ভবনসমূহের ক্ষতি করছে। ২০১৮ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট মন্তব্য করেছিলেন, সাদা মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরির তাজমহলও অকাল ক্ষতির মুখে পড়েছে, কারণ বায়ু ও পানির দূষণ তার আসল রঙ বদলে দিয়ে হলদে ও সবুজাভ-বাদামি করে দিয়েছে। তারা উত্তর প্রদেশের সরকারকে এর রক্ষার জন্য উদ্যোগ নিতে বলেছিলেন।

এই গবেষণাটি পিয়ার-রিভিউ মনোনীত, ওপেন অ্যাকসেস বৈজ্ঞানিক জার্নাল হেরিটেজে ২০২৪ সালের জুনে প্রকাশিত হয়। এতে দিল্লি ও ইতালির গবেষকরা ২০২১ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন।

লালকেল্লা, যা মোগল সম্রাট শাহজাহান নির্মাণ করেছিলেন, দিল্লির অন্যতম ঐতিহ্যবাহী স্মারক ও পর্যটন কেন্দ্র। 1947 সালে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওয়াহেরলাল নেহরু এখান থেকে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন, যার মাধ্যমে দেশকে স্বাধীনতার সূচনায় স্মরণীয় করে রেখেছেন। এরপর থেকে প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীরা এই প্রাচীরের সামনে ভাষণ দেন৷

গবেষকরা বলছেন, ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে দিল্লির বায়ুমান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বাতাসে থাকা ধুলিকণাসহ অন্যান্য দূষিত উপাদান কেল্লার দেওয়ালের উপর কালো আবরণ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাঁদের মতে, এ কালো স্তরটি ধীরে ধীরে জমে যায় এবং প্রাথমিক পর্যায়ে পরিষ্কারে সহজ। তারা আরও পরামর্শ দিয়েছেন যে, পাথরের সুরক্ষামূলক সিল্যান্ট বা আবরণ ব্যবহারে এই ধূলিকণা ও দূষণের গতি বা প্রভাব কমানো সম্ভব। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হলে এই কালো আবরণের ক্ষতি কমানো যেতে পারে বলে তারা মনে করেন।

সূত্র: বিবিসি

পোস্টটি শেয়ার করুন