প্রায় তিন মাস ধরে সবজির বাজারে অস্থিরতা চলছে। এই সময়ে সপ্তাহের পর সপ্তাহ সবজির দাম আরও বাড়ছে, যা সাধারণ ক্রেতাদের জন্য দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে বেশিরভাগ সবজির দাম অকল্পনীয় উচ্চতার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে, অনেকেরই সাধ্যের বাইরে চলে গেছে। বিশেষ করে কাঁচামরিচের দাম বেড়ে এখন ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে, যা নিম্নআয়ের মানুষদের জন্য আরও কষ্টদায়ক হয়ে পড়ছে।
বিক্রেতারা জানান, পূজার কারণে ভারতের সাথে সীমান্ত বন্ধ থাকাসহ টানা বৃষ্টিপাতের ফলশ্রুতিতে ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এর ফলশ্রুতিতে সবজির সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সাধারণ ক্রেতারা মনে করেন, এই দাম বাড়ার պատճառ হলো বাজারে তদারকির অভাব, যা দীর্ঘ সময় ধরে চলছে। তারা বলেন, বাজারে পর্যাপ্ত নজরদারির অভাব থাকায় দাম এমন উর্ধ্বগতি ঘটছে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, কয়েক সপ্তাহ ধরে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে থাকা বেগুন এখন আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। সাদার গোল বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়, যা আগে ছিল ৭০ টাকা। লম্বা ও সাদা গোল বেগুনের দাম বেড়ে ১০০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি হয়েছে। অন্যান্য সবজির দামে দেখা গেছে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। গাজর ১২০ টাকা, টমেটো ১৪০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৮০ থেকে ৯০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, করলা ১০০ থেকে ১২০ টাকা, চালকুমড়ো এখন ৬০ টাকা, শিঙা ৮০ টাকা, কচুরমুড়ি ৮০ টাকা, কাঁকরোল ৭০ টাকা, শসা ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, মূলা ৬০ টাকা, লাউ ৭০ টাকা, আলু ২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে, পেঁয়াজের দাম কমে কেজিতে ৭৫ টাকা হয়েছে, আর সিমের দাম পড়েছে ১৬০ টাকায়, যা আগের চেয়ে অনেক কম।
মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের বাজারে ক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে মাছ, মাংস ও সবজির দাম বেড়ে গেছে। তিনি বললেন, আজ বাজারে ক্রেতাদের সংখ্যা কম থাকলেও দাম কমছে না, বরং আরও বেশি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা একটি চক্রের মাধ্যমে দাম নিয়ন্ত্রণ করছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
প্রাণীজগতের আরেকটি দিক হলো, ব্রয়লার মুরগির দাম এখন কেজি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা, পাকিস্তানি মুরগি ৩১০ থেকে ৩২০ টাকা। খাসি মাংসের দাম ১৩০০ টাকা, বকরি ১০০০ টাকা, আর গরুর মাংসের কেজি দাম এখন ৭৫০ টাকা।
সবজির পাশাপাশি মাছের বাজারেও দাম আকাশচুম্বী। শুক্রবার মধ্যরাত থেকে নদীতে মাছ ধরা ও বিক্রি বন্ধের ঘোষণা থাকলেও, চড়া দামে এখন বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের মাছ। এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম এখন ২৫০০ টাকা, যা আগে ছিল ২৩00-২৩50 টাকা। পাশাপাশি ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ২১০০ টাকা, ৫০০ গ্রাম ১৫০০ টাকা, ৩০০ গ্রাম ১১১০ টাকা, এবং ১৫০-২০০ গ্রাম ওজনের মাছ ৬৫০-৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়।
চাষের শিং মাছের দাম কেজি দরে এখন ৩৫০ থেকে ৫৫০ টাকা, দেশের মাছের মধ্যে রুই মাছের দাম ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা, মাগুর ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা, চিংড়ির দাম ৮০০ থেকে ১৪০০ টাকা, বোয়াল ৬০০-৮০০ টাকা, কাতল ৪০০-৫৫০ টাকা, পোয়া ৩৫০-৪০০ টাকা, পাবদা ৪০০-৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কৈ মাছও ২২০-২৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
গরু ও খাসির মাংসের দামেও আশানুরূপ বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। গরুর গড় দাম ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা, গরুর কলিজা ৭৮০ টাকা, মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, বটের দাম নাগালহীন। খাসির মাংসের দাম কেজি ১২00 টাকা, যা আগে ছিল অপেক্ষাকৃত কম।
শাকসবজির মধ্যে, লাল শাক ২০ টাকা আঁটি, লাউ শাক ৪০ টাকা, কলমি শাক দুই আঁটি ২০ টাকা, পুঁই শাক ৪০ টাকা, ডাটা শাক দুই আঁটি ৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আলু ২৫ টাকা ও দেশি পেঁয়াজ ৭৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে, শুক্রবার মধ্যরাত থেকে নদীতে মাছ ধরা ও বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞার ফলে, ইলিশসহ বিভিন্ন মাছ চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন তেলাপিয়া, কাচকি, বাতাসি, পাঙ্গাশ ও অন্যান্য মাছের তালিকা। এর ফলে বাজারে মাছের সরবরাহ ও দাম সম্বন্ধে নানা দুশ্চিন্তা প্রকাশ করছেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা।