গাজায় অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনিদের জন্য ত্রাণ বহনকারী একটি নৌবহর ইসরাইলি নৌবাহিনী কর্তৃক আটক किए جانے ঘটনায় বৃহস্পতিবারের দিন বিশ্বজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের ঝড় উঠে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দেশে রাস্তায় নামেন হাজারো বিক্ষোভকারীরা, তারা ইসরাইলের এই অযৌক্তিক পদক্ষেপের কঠোর নিন্দা জানিয়ে আরও কঠোর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার দাবি তুলেছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্যারিস থেকে এএফপি জানিয়েছে, ইউরোপের বিভিন্ন শহর থেকে অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকা পর্যন্ত, সবখানে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার প্রতি সমর্থন জানাতে এবং ইসরাইলের অবরোধের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে মানুষ। গত মাসে বার্সেলোনা থেকে যাত্রা শুরু করা এই নৌবহরটি গাজায় সহায়তা পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে ছিল, তবে ইসরাইলি নৌবাহিনী এতে বাধা দেয়। জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রায় দুই বছর চলমান যুদ্ধের পর গাজায় এখন দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি চলছে।
ইসরাইলের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাজনীতিবিদ ও জলবায়ু আন্দোলনের ফ্রন্ট লিডার গ্রেটা থুনবার্গসহ ৪শ’ জনের বেশি ব্যক্তি বহনকারী ৪১টি জাহাজ বুধবার থেকে আটক করে উপকূলে পৌঁছাতে বাধা দেওয়া হয়েছে।
স্পেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বার্সেলোনায় প্রতিবাদের অংশ হিসেবে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ রাস্তায় নামে। তারা নানা স্লোগান দেয়, ‘গাজা হয়তো একা নয়’, ‘ইসরাইলের অবরোধ বন্ধ করো’ ও ‘ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা’। পুলিশ স্টেশন থেকে দাঙ্গা পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিপেটা করে। বেশ কয়েকটি নৌকাকেও বাধা দেওয়া হয়, যার মধ্যে সাবেক বার্সেলোনার মেয়র আদা কোলাউর নৌকাও অন্তর্ভুক্ত।
এমনকি নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি মান্ডলা ম্যান্ডেলার মতো স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্বদেরও এই প্রতিবাদে অংশ নিতে দেখা গেছে। ডাবলিনে আইরিশ পার্লামেন্টের বাইরে অংশ নেয় শত শত বিক্ষোভকারী, যারা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে এই আন্দোলনকে তুলনা করছেন। একজন নারী বিক্ষোভকারী মরিয়ম ম্যাকনালি বলেন, তিনি তার মেয়ের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হলেও তার সাহসিকতায় গর্বিত।
প্যারিসের প্লেস দে লা রিপাবলিকে প্রায় এক হাজার মানুষ জড়ো হয়েছেন, অন্যদিকে মার্সেই শহরে ইসরাইলের অস্ত্র বিক্রির ঘটনায় বিক্ষোভ হয়। ইউরোপের বিভিন্ন শহর, যেমন বার্লিন, দ্য হেগ, তিউনিস, ব্রাসিলিয়া ও বুয়েনস আইরসেও প্রতিবাদ চলে।
ইতালিতে মূল শ্রমিক ইউনিয়নগুলো এই নৌবহরের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। এতে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সমালোচনা করেন। মিলান, টরিনো, ফ্লোরেন্স এবং বোলোগনাসহ অন্যান্য শহরেও ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে।
অপরদিকে, তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ইসরাইলি দূতাবাসের বিরুদ্ধে দীর্ঘ মিছিল হয়, যেখানে ‘দখলের ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা’সহ ব্যানার দেখানো হয়। স্থানীয় ছাত্র ও তরুণরা ইসরাইলের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দিয়েছেন। একজন তরুণ ছাত্র এলিফ বোযকুর্তি বলেন, ‘আমরা সুমুদের নৌবহর ও সব বন্দীদের মুক্তির দাবি করছি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র হিসেবে, আমরা ইসরাইলের সঙ্গে সকল শিক্ষাগত ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বন্ধ করতে চাই।’
ব্রাসেলসে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সামনের রাস্তাতেও প্রায় তিন হাজার বিক্ষোভকারী অংশ নেন, যেখানে তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃত্বকে অবরোধ ভেঙে এই সংকট সমাধানে আহ্বান জানায়। সেখানে ধোঁয়া ও বোমা ফেলাসহ নানা ধরনের প্রতিবাদী অনুশীলন দেখা গেছে।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, সুইজারল্যান্ডের জেনেভা, গ্রিসের এথেন্স এবং মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরেও ব্যাপক বিক্ষোভ চোখে পড়েছে। বিশেষ করে জেনেভায় অগ্নিসংযোগ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব প্রতিবাদে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারণ মানুষ সরকার ও ইসরাইলের বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাব প্রকাশ করেছে।
সংক্ষেপে, এই বিশ্বব্যাপী আন্দোলন প্রতিফলিত করে, হাজারো মানুষের মানবতা ও স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতির জন্য একত্রিত হওয়ার প্রত্যয়, যা ইসরাইলের অবরোধ ও গাজায় চলমান সংকটের বিরুদ্ধে বিশ্বের মানবিক ও রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়ানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক বার্তা।