দেশের বিভিন্ন জেলায় গবাদি পশুর মধ্যে অ্যানথ্রাক্স (তড়কা) রোগের প্রদর্শনী দেখা দেওয়ায়, রোগটির বিস্তার রোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর দ্রুতই একটি সম্মিলিত ও ব্যাপক কার্যক্রম শুরু করেছে। অ্যানথ্রাক্স একজন ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ, যা গবাদিপশু থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে, তাই এটি চরম গুরুত্ব পাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে, স্থানীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও প্রশাসনের সমন্বয়ে গবাদি পশুর টিকাদান, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, উঠান বৈঠক, পথসভা, লিফলেট বিতরণ, মাইকিংসহ বিভিন্ন উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বিভিন্ন মাধ্যমে অ্যানথ্রাক্সের সচেতনতায় উদ্যোগ নিয়েছে, যেমন: দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া, স্থানীয় প্রশাসনের সাথে মিলিত হয়ে জনসচেতনতা কর্মসূচি চালানো। পাশাপাশি, মাঠ পর্যায়ে আক্রান্ত এলাকাগুলোতে পর্যবেক্ষণ চালানো, অসুস্থ পশু জবাই থেকে বিরত রাখা ও খামার প্রতিটি পশুকে টিকার আওতায় আনতে নানা কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
‘ওয়ান হেলথ’ উদ্যোগের আওতায় স্থানীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে যোগ দিয়ে জনসচেতনতা বাড়ানোর কাজ চলমান। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা নিয়মিত উঠান বৈঠক, প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার মাধ্যমে খামার মালিক ও সাধারণ জনগণকে সচেতন করে তুলছেন। কেউ অসুস্থ পশু জবাই না করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, মৃত পশুর অব্যবহার, খোলা স্থানে পশু কাটা বা ফেলা এড়াতে বলা হচ্ছে, এবং দ্রুত করলে নিকটস্থ ভেটেরিনারি হাসপাতালে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হচ্ছে।
রংপুর ও গাইবান্ধা জেলাকে অ্যানথ্রাক্সপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে বিশেষ টিকাদান কর্মসূচি চালানো হয়েছে। রংপুর বিভাগের ৩০ লাখ টিকা সরবরাহের মধ্যে প্রায় ২০ লাখ টিকা পাঠানো হয়েছে রংপুর ও গাইবান্ধা জেলায়। এর মধ্যে রংপুরের নয়টি উপজেলায় মোট ১ লক্ষ ৬৭ হাজার গরুকে টিকা দেয়া হয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি উপজেলা হল: পীরগাছা (৪৩,৪০০), কাউনিয়া (৩৪,০০০), রংপুর সদর (২৬,৫০০), মিঠাপুকুর (৩৪,৫০০), গংগাচড়া (৪,৮০০), তারাগঞ্জ (৪,৩০০), বদরগঞ্জ (৫,০০০) ও পীরগঞ্জ (৫,০০০)। এ ছাড়াও উঠান বৈঠক, পথসভা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ব্যাপক সচেতনতা তৈরির কাজ চলমান।
গোটা রংপুর জেলায় ৩৬টি কসাইখানা ও গবাদিপশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ৩৬টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে, এছাড়াও আরও ৩২টি মেডিকেল টিম টিকা প্রদানে নিয়োজিত।
গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ২৬ হাজার ৪০০ গরুকে টিকা প্রদান সম্পন্ন হয়েছে। আক্রান্ত এলাকায় দ্রুত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে মৃত পশু পুঁতে ফেলা, টিকাদান, মাইকিং, উঠান বৈঠক ও লিফলেট বিতরণ চালু রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে এবং ৫টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে, যা অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখছে।