প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর সিরিয়ায় প্রথমবারের মতো সংসদীয় নির্বাচনের আয়োজন করা হয়েছে। রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে এই নির্বাচন শুরু হয়, যা দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। সিরিয়ার সুপ্রিম কমিটি ফর পিপলস অ্যাসেম্বলি ইলেকশনের প্রধান মোহাম্মদ আল-আহমাদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, দামেস্ক এবং কিছু প্রদেশের প্রধান শহরগুলোতে ভোট প্রদান সহ পুরো প্রক্রিয়া শান্তিপূর্ণভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, দামেস্কের গ্রামীণ অঞ্চলের ভোটগ্রহণও সম্পন্ন হয়েছে এবং কিছু স্থানীয় কেন্দ্রে ভোটদান চলমান রয়েছে।
আহমাদ বলেছেন, ‘প্রক্রিয়াটি খুবই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হচ্ছে এবং সিরিয়ার জনগণ এই প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক সংসদ নির্বাচন দেখায় গর্বিত।’ স্থানীয় সংবাদমাধ্যমরা জানিয়েছেন যে, অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা এই নির্বাচনী প্রক্রিয়াক পর্যবেক্ষণে দামেস্কের জাতীয় গ্রন্থাগার কেন্দ্রে উপস্থিত ছিলেন।
সিরিয়ান আরব নিউজ এজেন্সি সানা’র প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পিপলস অ্যাসেম্বলি’র ২১০টি আসনের জন্য মোট ১ হাজার ৫৭৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁদের মধ্যে ১৪ শতাংশ নারী প্রার্থী। এই নির্বাচনের মাধ্যমে, ২১০ আসনের এক-তৃতীয়াংশ প্রতিনিধি সরাসরি প্রেসিডেন্টের মাধ্যমে মনোনীত হবেন, আর বাকি দুই-তৃতীয়াংশ স্থানীয় নির্বাচনী সংস্থার মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন।
নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য জাতীয় গ্রন্থাগার কেন্দ্রে কূটনৈতিক মিশন ও স্বীকৃত দেশদূতরা উপস্থিত ছিলেন। মুখপাত্র নাওয়ার নাজমা বলেন, প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নির্ধারিত সময় দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চললেও, অধিক সংখ্যক ভোটারের সুবিধার জন্য তা বিকেল ৪টা পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে। তিনি আরও জানান, চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা সম্ভবত সোমবার বা মঙ্গলবার একটি সংবাদ সম্মেলনে জানা যাবে।
উল্লেখ্য, সিরিয়ার দীর্ঘদিনের নেতা বাশার আল-আসাদ গত ডিসেম্বরে রাশিয়ায় পালিয়ে গিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন, তার আগে তিনি প্রায় ২৫ বছর দেশের শাসনভার পরিচালনা করেছিলেন। এতে দেশটিতে চলমান প্রায় ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটেছে। জানুয়ারিতে শারার নেতৃত্বাধীন নতুন অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন গঠন হয়।
তবে, এই পরোক্ষ নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে অনেক ভোটারের কাছেই অনৈতিক মনে হচ্ছে। গত মার্চ মাসে সিরিয়ায় একটি নতুন সাংবিধানিক ঘোষণা জারি করা হয়, যেখানে ইসলামের আইনের ব্যাপক গুরুত্ব দেওয়া হয়। নারীর অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকলেও, সমালোচকদের ধারণা, এই সিদ্ধান্তগুলো আরও কট্টরপন্থি দল ও গোষ্ঠীদের ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক হতে পারে।