বুধবার, ৫ই নভেম্বর, ২০২৫, ২০শে কার্তিক, ১৪৩২

মির্জা ফখরুলের অভিযোগ: জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সরকারের এখতিয়ার নেই

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়নের জন্য সরকার কোনও এখতিয়ার রাখে না। এ বিষয়ে তিনি স্পষ্ট করেছেন, সংবিধানের ১৫২ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, এরকম কোনো আদেশ জারি করার ক্ষমতা শুধুমাত্র রাষ্ট্রপতির। তিনি আরও জানান, সরকার ‘জুলাই সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ ২০২৫’ নামে একটি আদেশ জারির পরিকল্পনা করেছে, যা তাদের মতো কোনও কর্মকর্তা বা কর্তৃপক্ষের এখতিয়ার নয়। এতে বিস্তর আলোচনা ও যুক্তি দেখিয়ে তিনি বলেন, সংবিধানে উল্লেখিত ‘আদেশ’ আইনের মর্যাদা পায়, এবং এর জারি কর্তা রাষ্ট্রপতি।

বিএনপি মহাসচিব জানান, এই পরিকল্পিত আদেশের খসড়া সংযুক্তি-২ ও সংযুক্তি-৩-এ থাকা অন্য প্রস্তাবনা বা মতামত অস্পষ্ট বা অপ্রকাশিত। তিনি অভিযোগ করেন, সরকার এই প্রস্তাবগুলো একপেশে তৈরি করেছে এবং বিশ্লেষণ ও আলোচনা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া না অনুসরণ করে জবরদস্তিমূলকভাবে এগোচ্ছে। তিনি বলেন, দীর্ঘ এক বছর ধরে সংশোধন কমিশন ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা ভুয়ো ও অর্থহীন, যা শুধুই সময় ও 돈ের অপচয়।

মির্জা ফখরুল তুলে ধরেন, গণতন্ত্রে ভিন্নমত থাকা স্বাভাবিক, তবে ঐকমত্যের নামে একপেশে সিদ্ধান্ত নিলে তা দেশের জন্য ক্ষতিকর। তিনি বলেন, ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবে এমন দিক রয়েছে যেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমত বা নোট অব ডিসেন্টকে উপেক্ষা করা হয়েছে, যা গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে সংবিধান সংস্কার, গণভোট ও সংবিধান সংশোধনের বিষয়গুলো প্রকৃত গণতান্ত্রিক ধারায় হবে না, কারণ এগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া ও আলোচনা উপেক্ষা করে একটি একপেশে সিদ্ধান্ত আনা হয়েছে।

প্রস্তাবিত গণভোটের প্রস্তুতি ও সময়ের অপ্রতুলতা তুলে ধরে ফখরুল বলেন, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও, তার আগেই গণভোটের আয়োজন অপ্রয়োজনীয় এবং অযৌক্তিক। তিনি বলেন, একই খরচে ও একই দিন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠান করা হলে সেটিই সবচেয়ে যুক্তিসঙ্গত। তাছাড়া, সংবিধান সংস্কার সংক্রান্ত মূল প্রস্তাবনা ও সিদ্ধান্তগুলো জনগণের ম্যান্ডেট লাভের জন্য যথাযথ গণভোটের মাধ্যমে অনুমোদিত হয়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, জুলাই সনদে যে সংস্কার পরিকল্পনা করা হয়েছে, তার বাস্তবায়ন এমনকি যেসকল আইনি বা বিধিবিধান প্রয়োজন, তা সংসদীয় ও আইনগত প্রক্রিয়া অনুসারে হবে। তবে সরকার নিজে নিজেই এই প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে পারে, কিন্তু এর জন্য সংসদ বা সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটিগুলোর অনুমোদন বা আলোচনা দরকার। এসব বিষয় আলোচনায় আসেনি, বরং অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে পরিবর্তন ও সংশোধনী আনা হয়েছে।

তিনি আশংকা প্রকাশ করেন, এই অযৌক্তিক ও বিভ্রান্তিকর প্রস্তাবগুলো দেশের একতা ও স্বার্থের জন্য ক্ষতিকারক হবে। তিনি বলেন, দীর্ঘ গণতান্ত্রিক সংগ্রাম ও আন্দোলনের ফলে অর্জিত জাতীয় ঐক্য অক্ষুণ্ন রাখতে হবে, যাতে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পরিচালিত হয়। আদর্শ ও স্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের ভবিষ্যত শান্তি ও stability নিশ্চিত করা জরুরি।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির অন্যান্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নজরুল ইসলাম খান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, সেলিম রহমান ও সালাউদ্দিন আহমদ।

পোস্টটি শেয়ার করুন