বুধবার, ৫ই নভেম্বর, ২০২৫, ২০শে কার্তিক, ১৪৩২

যুদ্ধবিরতির পরেও গাজায় হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল

যদিও যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে, তারপরও গাজায় দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী বিভিন্ন এলাকায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে ইসরায়েলের বিমান হামলার খবর পাওয়া গেছে, যা তখনকার পরিস্থিতির আতঙ্ক বাড়িয়ে দিয়েছে। এখনও পর্যন্ত, ইসরায়েল অবরুদ্ধ এই উপত্যকায় ২৩৬ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে বলে খবর রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা নিশ্চিত করেছে।

অধিকৃত পশ্চিম তীরে, ইসরায়েলি বাহিনী ও বসতি স্থাপনকারীদের হামলায় এক কিশোরসহ দু’জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যা পরিস্থিতির জরুরীতা ও সংঘর্ষের ঘন ঘন ঘটনার প্রমাণ দেয়।

অপরদিকে, গাজা শহরে চলমান তল্লাশি অভিযানের পর আরও তিনজন বন্দিকে হত্যা করে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস। এর আগে, যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে ইসরায়েল ৩০ ফিলিস্তিনির দেহ ফিরিয়ে দেয়, যাদের বেশিরভাগে নির্যাতনের চিহ্ন দেখা গেছে। These মরদেহগুলো আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের মাধ্যমে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

অক্টোবরের শুরুর দিকে স্বাক্ষরিত বন্দি-বিনিময় চুক্তির আওতায়, নিহত ফিলিস্তিনিদের মরদেহ ফেরত দেয়া হয়। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই সর্বশেষ প্রতিমান্তে ২২৫ মরদেহ ফিরে এসেছে, যা মোট মৃতের সংখ্যাকে নির্দেশ করে।

মেডিকেল সূত্র জানাচ্ছে, অনেক মরদেহে নির্যাতনের দাগ, চোখ বাঁধানো অবস্থায় এবং হাতকড়া পরানো অবস্থায় পাওয়া গেছে। কিছু দেহ পচে গেছে বা পুড়ে গিয়েছে, আবার অনেকের দেহে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নেই বা দাঁত নেই, যা নিখুঁত অগ্নিসংযোগ ও নির্যাতনের চিত্র প্রকাশ করে।

ইসরায়েল হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে কারাগারে আটক রেখেছে, অনেকের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ না দিয়ে। বরাবরই খবর উঠেছে যে, কারাগারে ফিলিস্তিনিদের উপর নির্যাতন চালানো হয়। ধরা হয়, গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এই নিপীড়নের মাত্রা আরও বেড়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণ বন্ধে চুক্তির আওতায়, হামাস ২০ জন জীবিত বন্দি মুক্তি দিয়েছে, আর ইসরায়েল প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক বন্দিকে ছেড়ে দিয়েছে। এর ফলে, গাজার নগর কেন্দ্রগুলো থেকে আংশিক প্রত্যাহারও সম্পন্ন হয়েছে।

৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া অভিযানে, ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৬৮,৮৫৮ জন নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজার ৬৬৪ জন আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলের এই হিংসাত্মক হামলার ফলে গাজার অনেক বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। মধ্যপ্রাচ্যের প্রখ্যাত নেতা ইয়াসির আরাফাতের বাড়িটিও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত। এই বাড়িতে বহু ফিলিস্তিনি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে, যারা এখন ধ্বংসস্তূপের মাঝে বাস করছে।

ঘটনার পর, এই বাড়ির ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কারের জন্য স্থানীয় অধ্যাপক আশরাফ নাফেস আবু সালেম ও তার পরিবার বাড়ির আঙিনায় কাজ শুরু করেছেন। তিনি বলেন, ‘বাড়ির বেশিরভাগ অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে, পুড়ে গেছে।’ বাড়ির দরজার ওপর থেকে এক পোস্টারে ইয়াসির আরাফাতের ছবি দেখা যায়, যাঁর মুখাবয়ব এখন গুপ্ত এবং মলিন। তার পেছনে ফিলিস্তিনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের ছোট ছবি রয়েছে।

অধ্যাপক আবু সালেম বলেন, ‘আমরা ১৯৮৭ সালের প্রথম ইনতিকাফ বা গণজাগরণের সময় থেকেই এই আন্দোলনের অংশ, এবং পাথর ছুড়েই আমাদের জন্ম।’ তিনি আরও বলছেন, ‘প্রেসিডেন্ট আবু আম্মার আমাদের জন্য ফিলিস্তিনের সংগ্রামের প্রতীক।’

পোস্টটি শেয়ার করুন