অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের যে রায় দেওয়া হয়েছিল, তা ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি বুধবার সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদনের শুনানিতে এই মন্তব্য করেন। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ওই রায়টি বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলকে সুবিধা দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে লেখা হয়েছিল এবং এরপর কোনও রিভিউ না করে সেটি আদালত পরিবর্তন করেন। এটি দণ্ডবিধির ২১৯ ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তিনি আরও বলেন, আমরা সত্যিকার গণতন্ত্র চাই; গণতন্ত্রের নামে কোনও অজুহাত বা লেবাস চাই না। ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের মাত্র তিন বছর পরই প্রথম আমাদের গণতন্ত্র হত্যা করা হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই এটি একটি দুঃখজনক অন্ধকার অধ্যায়।
এদিকে, প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার আবার রাষ্ট্রপক্ষের শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন। এর আগে বিএনপির পক্ষে এই আপিলের শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। জামায়াতের পক্ষে এই আপিলের শুনানি শেষ করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। এছাড়া, পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিকের পক্ষে এই শুনানিতে অংশ নেন সিনিয়র আইনজীবী শরীফ ভূইয়া।
১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন। ২০১১ সালের ১০ মে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এই সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে বাতিল করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে, ২০১১ সালের ৩০ জুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের জন্য পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের অনুমোদন হয়। এরপর, ওই বছর ৩ জুলাই গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে এটি কার্যকর হয়।
বিচারপ্রার্থীরা সেই সময় এই বিষয়ের ওপর বিভিন্ন আবেদন করেন, যার মধ্যে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিক ও একজন ব্যক্তি রিভিউ আবেদন করেন। এই আবেদন শুনানির জন্য ২৭ আগস্ট লিভ মঞ্জুর হয় এবং ২১ অক্টোবর আপিলের শুনানির দিন ধার্য করা হয়।
অবশেষে, ১৭ ডিসেম্বর বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও দেবাশীষ রায় চৌধুরীর বেঞ্চ তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের সংবিধানের নির্ধারিত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে ঘোষণা করে। এটি দেশের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সংবিধানের মূলনীতি লঙ্ঘনকারী সিদ্ধান্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়।





