শনিবার, ৮ই নভেম্বর, ২০২৫, ২৩শে কার্তিক, ১৪৩২

মেয়র নির্বাচনের পরে মামদানির সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো

নিউইয়র্ক সিটির নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি তার নির্বাচনী বিজয়ের পর অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন। তিনি ১৮৯২ সালের পর এই শহরের সর্বকনিষ্ঠ মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন এবং আফ্রিকায় জন্মগ্রহণকারী প্রথম মুসলিম এই পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। গত বছর তিনি বিনা প্রাতিষ্ঠানিক দলের সমর্থন নিয়ে প্রাথমিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, যেখানে তিনি সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমো এবং রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস সিলওয়ারকে হারিয়ে বিনউৎসাহে জয় লাভ করেন।

অল্প অর্থ ও পরিচিতি নিয়ে, এককভাবে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া তার জন্য ছিল এক বড় অর্জন। তিনি তরুণ, ক্যারিশম্যাটিক এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্বচ্ছন্দ, যা তাকে এক নতুন ধরনের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে উপস্থাপন করে। মামদানির বিষয়বস্তু রাজনৈতিক দর্শনে এমন এক নেতা, যার জন্য অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে খুঁজছিলেন। তার জাতিগত পরিচয় দলগত বৈচিত্র্য ও উদার মানসিকতাকে প্রতিফলিত করে। তিনি বামপন্থার মূল লক্ষ্যসমূহকে গর্বের সঙ্গে সমর্থন করেছেন, যেমন বিনামূল্যে শিশুপালন, গণপরিবহন সুবিধার সম্প্রসারণ এবং সরকারি হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মুক্ত বাজার ব্যবস্থার উন্নয়ন।

তবে তিনি এখন সাধারণ সাধারণ জনগণের মধ্যেও অপ্রত্যাশিতভাবে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। নিউইয়র্কের দ্যা ডেমোক্র্যাটিক পার্টি থেকে তিনি অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন, তবে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়গুলোতে তাঁর মনোযোগ বিশেষ। বিশেষ করে অস্থির জনসাধারণের মধ্যেও তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে তিনি বিভিন্ন সংস্কৃতিকেও গুরুত্ব দিয়েছেন।

সমালোচকরা সতর্ক করেছেন যে, আসলে তিনি ভাবছেন এমন এক প্রার্থী, যিনি অনেকের মতে অনির্বাচিত এবং রিপাবলিকানরা আনন্দের সঙ্গে তাকে অতি-বাম প্রচার করছে। এরপরও, মঙ্গলবার রাতে তিনি জয়ীরূপে দেখা গিয়েছেন, যেখানে তিনি নিজের নতুন মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।

তার প্রতিদ্বন্দ্বীরা, যারা প্রায়শই তাকে সাধারণ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রমশ দূরে সরায়, তারা তাদের আলোচনায় মামদানির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে আসছেন। তিনি তার প্রথম দিন থেকেই এই উচ্চাভিলাষী এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছেন, যেখানে কর বৃদ্ধির বিরোধিতা এবং যথেষ্ট তহবিল থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নিউইয়র্কের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা এবং বিশিষ্টজনরা নানা সময়ে মামদানির পথ রোধ করেছেন, তবে তিনি ধীরে ধীরে সকলের সঙ্গে সমঝোতার পথ খুঁজে নিচ্ছেন। তিনি গাজা ও ইসরায়েলের ইস্যুতেও কঠোর ভাষায় ভাষ্য দিয়েছেন, এমনকি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে যুদ্ধাপরাধের জন্য দায়ী করার কথাও বলেছেন। তবে এই সব বিষয়ে পরবর্তী দিনগুলোতে নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। আপাতত তাকে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে তুলতে হবে, কারণ তার প্রতিদ্বন্দ্বীরা এই সুযোগে আঘাত হানার পরিকল্পনা করছে।

যদিও তার প্রচারণা জাতীয় স্তরে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, কিন্তু এই মুহূর্তে তিনি এখনও আমেরিকার বৃহত্তম শহরের বাকি অংশের কাছে একটি শূন্য স্লেট, যেটি কিছু লেখা ছাড়া কিছু নয়। সিবিএসের এক সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ৪৬ শতাংশ মার্কিন নাগরিক নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচন গভীরতার সঙ্গে অনুসরণ করছেন। এই পরিস্থিতি মেয়র হিসেবে মামদানির জন্য সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ—উভয়ই তৈরি করছে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো নেতারাও এই নতুন মেয়রকে সমাজতান্ত্রিক হুমকি হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করবেন, যিনি আসলে শহর এবং দেশের জন্য অশুভ পরিবর্তন আনার মতো দাবি করছেন। ট্রাম্পের সঙ্গে তার রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে। অন্যদিকে, নিউইয়র্কের সিনেটর চাক শুমারসহ কিছু অসন্তুষ্ট নেতা তার প্রচার ও পরিকল্পনায় বিভ্রান্তিও আনতে পারেন।

ত لكنها লাভের দিক থেকে দেখতে গেলে, মামদানির উপর অতীতের অনেক বোঝা নয়, যা তার বিরোধীদের মূল আয়ু ছিল। জানুয়ারিতে শপথ নেবার পর থেকে, তিনি তার রাজনৈতিক খ্যাতি গড়ে তুলতে শুরু করবেন এবং প্রতিদ্বন্দ্বীরা এতে বাধা দিতে পারবে না। তার প্রতিভা এবং ক্ষমতা তাকে এখানে এনেছে, তবে সামনের দিনগুলোতে তার জন্য অপেক্ষা করছে বড় পরীক্ষা।

নিউইয়র্কবাসীরা শহরকে বিশ্বের কেন্দ্রবিন্দু মনে করতে পছন্দ করেন, তবে এই নির্বাচন শুধুমাত্র একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, বরং বর্তমান রাজনৈতিক মেজাজের একটি বড় ইঙ্গিত। আগামী দিনগুলোতে এই মেয়রের নেতৃত্ব ও উদ্যোগ অনেক প্রশ্নের মুখে পড়বে, এবং তার সামর্থ্য প্রমাণের সময় আসছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন