আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশন (ইসি) নতুন আচরণবিধির গেজেট প্রকাশ করেছে। এই নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, এবার প্রথমবারের মতো নির্বাচনী প্রচারে পোস্টার ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি, এক সঙ্গে প্রার্থীরা তাদের ইশতেহার ঘোষণা করার জন্য এক মঞ্চে উপস্থিত হওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যেখানে আচরণবিধি মানার অঙ্গীকারনামা দাখিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
নির্বাচনী বিধিমালা লঙ্ঘনের জন্য ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ডের পাশাপাশি দেড় লাখ টাকার জরিমানা আর দলের জন্যও একই পরিমাণ অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এমনকি, বিধিমালা ভঙ্গ করলে প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিলেরও ব্যবস্থা রয়েছে।
ভোটের প্রচারকালে ড্রোন ও ড্রোনের মতো আধা স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিদেশে প্রচারণার ক্ষেত্রেও এ নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকবে। একজন প্রার্থী তার সংসদীয় এলাকাতে সর্বোচ্চ ২০টি বিলবোর্ড ব্যবহার করতে পারবে, যার প্রত্যেকের দৈর্ঘ্য ১৬ ফুট এবং প্রস্থ ৯ ফুটের বেশি হওয়া যাবে না।
গতকাল (সোমবার) রাতের দিকে, ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ স্বাক্ষরিত ‘রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০২৫’ শিরোনামে এই গেজেট প্রকাশিত হয়। এই বিধিমালায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে কঠোর নিয়ম আরোপ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কোনও প্রার্থী বা তার এজেন্ট সামাজিক মাধ্যমে প্রচারণা চালাতে চাইলে অবশ্যই তাদের জাতীয় বা ব্যক্তিগত সামাজিক মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট আইডি, ইমেইল ও অন্যান্য শনাক্তকরণ তথ্য রিটার্নিং অফিসারের কাছে আগে থেকে অবশ্যই জমা দিতে হবে।
নির্বাচনী প্রচার ও অন্যান্য কার্যকলাপে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ঘৃণার বক্তব্য, বিভ্রান্তিকর তথ্য, ব্যক্তিগত চেহারা বিকৃত করা বা অন্য কোনো বানোয়াট তথ্য প্রচার করলে কঠোর শাস্তির বিষয়ও উল্লেখ করা হয়েছে। ব্যক্তিগত ও গোষ্ঠীগত আক্রমণ, ধর্মীয় বা জাতিগত অনুভূতির অপব্যবহার, এবং প্রমাণসাপেক্ষে সত্যতা যাচাই ছাড়াই সামাজিক মাধ্যমে তথ্য প্রকাশ বা শেয়ার করাও দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে ধরা হয়েছে।
নির্বাচনী স্বার্থ হাসিলের জন্য কোনো প্রকার অপপ্রচার, গুজব ও এআই এর অপব্যবহার বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া, নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য বিদেশে জনসভা বা প্রচারণা বন্ধ থাকবে।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তাদের পক্ষে ভোটার স্লিপ বিতরণ করা গেলেও, সেখানে প্রার্থীর নাম, ছবি বা প্রতীক উল্লেখ করা যাবে না। শুধুমাত্র ডিজিটাল বিলবোর্ডে আলোর ব্যবহার অনুমোদিত; অন্য যেকোনো আলোকসজ্জা বা পরিবেশবান্ধব উপকরণ ব্যবহার করতে হবে। পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ও লিফলেটের জন্য পলিথিন ও প্লাস্টিক ব্যানার ব্যবহারও সম্পূর্ণরূপে নিষেধ করা হয়েছে।
প্রচারে শব্দের মাত্রা ৬০ ডেসিবেল অতিক্রম করতে পারবে না। রাজনৈতিক দলগুলো এবং প্রার্থীরা তাদের অঙ্গীকারনামা নিয়মিত পালন করবে, যা নির্বাচন কমিশনে দাখিল করতে হবে। প্রার্থীর জন্য, নির্বাচনী অঙ্গীকারনামার আওতায়, বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করলে শাস্তির মোকাবেলা করতে হবে।
সব প্রার্থীর এক মঞ্চে ইশতেহার ঘোষণা ও প্রকাশের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন নির্বাচন কমিশন। এতে, সংশ্লিষ্ট প্রার্থী ও নির্বাচনী কর্মকর্তারা একটি নির্দিষ্ট দিনে তাদের নির্বাচনী ইশতেহার বা প্রতিপাদ্য ঘোষণা করবেন।
অবশেষে, প্রার্থিতা বাতিলের জন্য নানা পরিস্থিতির উল্লেখ করা হয়েছে। যদি কোনও রেকর্ড বা রিপোর্ট দ্বারা জানা যায় যে, কোনও প্রার্থী বা তার এজেন্ট বিধিমালা লঙ্ঘন করেছেন বা করার চেষ্টা করেছেন তখন কমিশন তাৎক্ষণিক তদন্তের নির্দেশ দেবে। তদন্তের ফলাফলে যদি মনে হয় যে, আইন লঙ্ঘনের জন্য প্রার্থী বা তার সহযোগী দায়ী, তবে প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের জন্য সংশ্লিষ্ট আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।




