রবিবার, ১৬ই নভেম্বর, ২০২৫, ১লা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

পাকিস্তানে আজীবন দায়মুক্তি এবং সেনাপ্রধানের ক্ষমতা বৃদ্ধি

পাকিস্তানের পার্লামেন্টের ভোটে দেশটির সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরকে নতুন ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, পাশাপাশি তাকে গ্রেপ্তার ও বিচার থেকে আজীবন দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এই পদক্ষেপটি দেশটিতে স্বৈরতন্ত্রের পথে আরও অগ্রগতি হিসেবে বিশ্লেষকদের দ্বারাও বিবেচিত হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার এই সিদ্ধান্তের জন্য সংবিধানের ২৭তম সংশোধনী আইনের সই করা হয়, যা দেশের শীর্ষ আদালত পরিচালনা পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আনবে।

সমালোচকদের মতে, এই পরিবর্তন দেশটির প্রশাসনিক কাঠামোকে শক্তিশালী করবে এবং মামলার জট কমানোর চেষ্টা করবে। পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের রাজনীতি প্রভাবিত করেছে পারমাণবিক অস্ত্রধারী সামরিক বাহিনী। তারা কখনো স্বাধীনভাবে ক্ষমতা দখল করেছে, আবার কখনো পর্দার আড়ালে থেকে সরকারকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই নতুন সংশোধনী দেশের ক্ষমতার ভারসাম্যকে একটি হাইব্রিড শাসনের বাইরে নিয়ে গিয়ে সামরিক বাহিনীর ঝুঁকি বাড়িয়েছে। ওয়াশিংটনের উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান মন্তব্য করেছেন, ‘এই সংশোধনী সম্ভবত পাকিস্তানের শীর্ষ সিস্টেমের সবচেয়ে শক্তিশালী ইঙ্গিত, দেশের হাইব্রিড শাসন পদ্ধতি এখনই পরিবর্তিত হচ্ছে।’

এনিয়ে বলা হচ্ছে, আসিম মুনির এখন পাকিস্তানের নৌ ও বিমান বাহিনীর দায়িত্বও পালন করবেন। তার ফিল্ড মার্শাল পদবী আজীবনের জন্য নির্ধারিত হলেও, প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে রাষ্ট্রপতি অবসর দেওয়ার পরেও তাকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব চালিয়ে যেতে হবে। ধারণা করা হচ্ছে, এই সিদ্ধান্তের ফলে তিনি ভবিষ্যতে জনপরিসরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিবর্তন পাকিস্তানের সামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারি ও প্রশাসনিক কাঠামোকে আরও স্পষ্ট করে। সরকার-পরিচালিত সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস অব পাকিস্তান বলেছে, এই পরিবর্তনের মাধ্যমে দেশটির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আধুনিক যুদ্ধের চাহিদা অনুযায়ী সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। তবে অন্যদের বিশ্লেষণে এটি বোঝা যায় যে, এটি সেইসব শক্তিগুলোর ক্ষমতা আরও বাড়ানোর চেষ্টা।

অন্যদিকে, মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিকরা সতর্ক করে দিয়েছেন, এই নতুন পরিবর্তন বিচার বিভাগে স্বাধীনতাকে হ্রাস করছে এবং বিচারপ্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে। বিচারকদের বদলে দেওয়াও সহজতর হওয়ায় তাদের চাপের মুখে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ ও বিচার বিভাগের অন্য নেতাদের ক্ষোভ প্রকাশের ঘটনাও ঘটেছে। সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি তাদের পদত্যাগপত্র জমা দেন, যেখানে তারা বলেছেন, সংবিধানের মৌলিক স্বত্তাকে হরণ করা হচ্ছে। তবে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এই পদত্যাগের পিছনে তারা তাদের নৈতিক অবস্থান থেকে সরে আসার ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

এই নতুন সংশোধনীর ফলে বিচারকদের বদলি ও নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা কিছু সমালোচকদের মতে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হ্রাস করার এক ধাপ। আইনজীবীরা বলছেন, এই ব্যবস্থা বিচারপ্রক্রিয়াকে কেন্দ্রীভূত ও দুর্বল করবে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিবর্তন দেশটিতে সামাজিক স্থিরতা ও গণতান্ত্রিক মানসিকতার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, এই সংশোধনী পাকিস্তানের ক্ষমতার ভারসাম্যকে আরও কেন্দ্রীভূত করছে, যা সামরিক বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে। এই প্রক্রিয়া চলমান থাকায় ভবিষ্যতে আরও কঠিন পরিস্থিতি প্রত্যাশা করছে বিশ্লেষকরা।

পোস্টটি শেয়ার করুন