শনিবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৫, ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

আদালতের রায়ে ফিরল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা

বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ধর্মঘট করে ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করলেন। এর ফলে, চৌদ্দ বছর আগে বাতিল হওয়া এই ব্যবস্থাটি আবারো ফিরে এলো। বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ আদালত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়কে রিভিউ করে এই সিদ্ধান্ত দেন।

এর আগে, ১১ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এই শুনানি শেষ করেন। প্রচলিত রাজনীতির পটভূমিতে আওয়ামী লীগ সরকার নামানোর পর থেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল দীর্ঘদিন ধরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরানোর দাবি জানিয়ে আসছিল। ২০২৪ সালে সম্ভাব্য অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারানোর পরও এই বিষয়টি আবার করে আলোচনায় আসে।

২৬ আগস্ট এই ব্যবস্থা বাতিলের রায়কে পুনর্বিবেচনার আবেদন মঞ্জুর করে আদালত। এরপর ২১ অক্টোবর থেকে আপিলের শুনানি চলতে থাকে। মূলত, ২০১১ সালে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের মাধ্যমে এই ব্যবস্থা অবসান ঘটে। তখন রাজনৈতিক বিতর্কের কারণে এই সংশোধনী বাতিল করে আদালত। তবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার উদ্দেশ্য ছিল অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য একটি নিরপেক্ষ পরিবেশ সৃষ্টি করা।

এখন, আদালতের এই রায় আসন্ন নির্বাচনে কার্যকর হবে না বলে আইনজীবীরা মনে করছেন। কিছু বিশ্লেষক বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে আলোচিত এই প্রথাটি কেবল প্রশাসনিক কাঠামো নয়, এটি দেশের রাজনীতিতে আস্থা ও বিশ্বাসের গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। এর জন্ম ১৯৯১ সালে, তখন বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে কিছু দিন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নামে একটি অপ্রচলিত ব্যবস্থা চালু হয়। কিন্তু ১৯৯৪ সালে সময়ে বেশ কিছু কারচুপি ও বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটে, যা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে। এর ফলে, ১৯৯৬ সালে রাজনৈতিক দলগুলো ভয়ানক আন্দোলন শুরু করে, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য চাপ দিতে থাকেন।

আন্দোলনের ফলস্বরূপ, ১৯৯৬ সালে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী মাধ্যমে এই ব্যবস্থা কংগ্রেসের সাংবিধানিক রূপ পায়। এই ব্যবস্থা অনুযায়ী, মেয়াদ শেষের পরে একটি নিরপেক্ষ, নির্দলীয় সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করবে, এবং নতুন নির্বাচন ৯০ দিনের মধ্যে আয়োজনের ব্যবস্থা থাকবে। এই প্রক্রিয়া দ্বারা ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের মনোরম, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্পন্ন হয়।

অথচ, ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয় একেবারে নতুন ধরনের জটিলতায়। বিশেষ করে, প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ নিয়ে রাজনৈতিক কূটক্ষেধের সৃষ্টি হয়। একই বছর, সেনা সমর্থিত বিতর্কিত সরকারের মুখোমুখি হয় দেশ, যা পরে ১/১১ সময়ে পরিচিতি পায়। এই সরকার দুই বছর ক্ষমতায় থাকাকালীন, সংবিধান বহির্ভূত কাজকর্মের অভিযোগ ওঠে। ২০১১ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রথাকে অবৈধ ঘোষণা করে, এবং সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী দিয়ে স্থায়ীভাবে বাতিল করে দেয়।

এর ফলে, প্রবর্তিত নির্বাচনের জন্য কোনও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা থাকেনি। বর্তমানে, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনগুলি অনুষ্ঠিত হয়েছে ক্ষমতাসীন দলের অধীনে, যা আন্তর্জাতিক মহলে উচ্চমাত্রার বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। বিরোধী দলগুলো অভিযোগ করে, ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবের কারণে, নির্বাচনপ্রক্রিয়া এখন অনেকটাই প্রশ্নের মুখে। তারা বলে, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচালনায় রাজনৈতিক প্রভাব থাকায় ভোটধিকার স্বাধীনভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব হয় না।

পোস্টটি শেয়ার করুন