শনিবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৫, ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

মির্জা ফখরুলের ভাষায় বাংলাদেশ এখন ট্রানজিশনাল পিরিয়ডে

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আজকের বাংলাদেশ একটি ট্রানজিশনাল পিরিয়ডের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। দেশের রাজনীতি এক ধরনের দোলাচলে রয়েছে, যেখানে নির্বাচন আসন্ন but এখনও তার চূড়ান্ত ঘোষণা বা শিডিউল দৃশ্যমান হয়নি। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘নির্বাচন হবে এবং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।’

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘নির্বাচন শুধু একটি প্রক্রিয়া নয়; এটি ডেমোক্রেসিকে ফিরিয়ে আনার মূল মাধ্যম। একটি সত্যিকার গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতেই আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’ গতকাল বুধবার রাজধানীর গুলশানে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এই অনুষ্ঠানে ‘চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে বিএনপি’ বইটির মোড়ক উন্মোচন ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শনীর আয়োজনে বিএনপি ও ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ সেন্টার অংশ নিয়েছিল।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মির্জা ফখরুল নিজে। তিনি বলেন, ‘একটি টেকসই রাষ্ট্র গড়তে গেলে বিচার বিভাগ, সংসদ, গণমাধ্যম ও প্রশাসনকে স্বাধীন ও শক্তিশালী করতে হবে।’

তিনি গত ১৬ বছর ধরে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর চালানো দমন-পীড়ন, গুম, খুন ও মিথ্যা মামলার ভয়ঙ্কর চিত্র তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, বিএনপি একটি লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি। পৃথিবীর কোনো লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিই এই ধরনের অত্যাচার, নির্যাতন, হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে যায়নি বলে দাবি করেন তিনি। তিনি জানিয়েছেন, ৬০ লাখের বেশি মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিশোধ নেওয়া হয়েছে; প্রায় ২০ হাজার নেতা-কর্মী শহীদ হয়েছেন। এসব ঘটনা ইতিহাসে অন্তর্ভুক্ত ও ডকুমেন্টে নথিভুক্ত করতে গবেষণার মাধ্যমে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

সংস্কার নিয়ে চলমান বিতর্কের প্রসঙ্গ জোড়ালোভাবে তুলে ধরে দলটির দীর্ঘ দিনের প্রস্তুতি ও পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, আজকের দিনেও সংস্কার নিয়ে জোরেশোরে আলোচনা হচ্ছে, যদিও বিএনপি আগে থেকেই সংস্কারের দাবি জানিয়েছিল। তিনি বলেন, কোনো দল যদি কাউকে ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য সংস্কারের দাবি করা বলে মনে করে, সেটা সংকীর্ণতা।

মির্জা ফখরুল জানান, বিএনপি বিপ্লবী দল নয়, বরং একটি লিবারেল ডেমোক্রেটিক দল হিসেবে সব ধর্ম, বর্ণ ও মতাবলম্বীদের সঙ্গে নিয়ে ‘রেইনবো স্টেট’ গড়ে তুলতে চান। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ‘আমাদের অবস্থান একটিই—উই আর লিবারেল ডেমোক্র্যাটস।’

তিনি আরও বলেন, দেশে একদিকে শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধের রায় কার্যকর হচ্ছে, অন্যদিকে দেশজুড়ে ম্যাক্রোবাসি, ভয়ঙ্কর ও বর্বরোচিত সহিংসতা চলমান। এসব বিষয়ে তিনি জানেন না কীভাবে নম্রভাবে প্রতিরোধ করা যায়। তিনি মনে করেন, এই রায়গুলোকে অপ্রাসঙ্গিক বা কম মূল্যবান মনে করানোর জন্য বিশেষ শক্তি বা মহল জাতির দৃষ্টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, এইসব মহলের কোনও একটিই সতর্কতা ও চালাকির সঙ্গে নীতিকথা কোণঠাসা করছে কি না—তা দেখতে হবে। আর কোনও মহল কি বিভেদ ও ফাটল সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে কি না, সেই বিষয়েও সজাগ থাকতে হবে।

গণতন্ত্রের চর্চার অভাবকে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও দীর্ঘস্থায়ী সংকটের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের মূল মানে হলো—তুমি আমার মতের সঙ্গে একমত নাও হতে পারো, কিন্তু তোমার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আমাদের সকলের মৌলিক অধিকার। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এখনে অনেকেই অন্যের মতের প্রতি সহনশীল নয়।

খালেদা জিয়ার গণতন্ত্রের জন্য দৃঢ় অবস্থানও তিনি স্মরণ করেন। বলছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার একটিমাত্র ছোট্ট বিবৃতি—‘প্রতিশোধ নয়, প্রতিহিংসা নয়, আসুন আমরা সবাই একসঙ্গে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করি’—দেশ ও দলের ভবিষ্যত পথনির্দেশনা দেয়। বিদেশে থাকলেও তারেক রহমানও এই গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জনগণকে সংগঠন ও সংগঠিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান। বিভিন্ন পর্যায়ের দলীয় নেতা-কর্মীরা, বিশিষ্ট ব্যক্তিরা, এবং লেখক-সাংবাদিকরাও বক্তব্য রাখেন। উপস্থিত ছিলেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিনসহ অন্য নেতারা। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিএনপি ভবিষ্যতের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছে ও গণতান্ত্রিক সংগ্রামের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন