চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শাহ ওয়ালীউল্লাহ ইনস্টিটিউট প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে নানা অনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে যাচ্ছে। অভিযোগগুলোতে বলা হয়, কিছু শিক্ষক অবাধে অর্থের লেনদেন, নিয়মবিরুদ্ধ নির্মাণ কাজ, প্রশ্নপত্র প্রুফ, মডারেশন আর অন্যান্য খাতে ব্যাপক অনিয়ম চালিয়ে আসছেন। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) একটি বিস্তারিত অভিযোগ দাখিল করা হয়, যেখানে উল্লেখ করা হয়, প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ আবু সোলেমান ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নুরুল আল আমিনের বিরুদ্ধে নানা অসাধু কর্মকাণ্ডের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
অভিযোগে জানানো হয়, ২০২০-২১ থেকে ২০২৫-২৬ অর্থবছর পর্যন্ত ব্যাপক অর্থবৈষম্য ও অনিয়মের মাধ্যমে কাজ করা হয়েছে। পরে দরপত্র ছাড়াই কোটি টাকার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়, যেখানে শ্রমিক নিয়োগ হয় দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে এবং কোনো সরকারি অনুমোদন বা পর্যবেক্ষণ ছাড়াই এসব কাজ চালানো হয়। এসব ব্যয় প্রায় ১ কোটি ৫ লাখ টাকা ছাড়িয়েছে, যদিও এর কোনো নথিপত্র বা রেকর্ড নেই।
এছাড়াও, প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটিতে গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষক-অভিভাবকদের মতামতের পরিবর্তে প্রধান শিক্ষক নিজস্ব পছন্দমতো সদস্য নির্বাচন করেছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র প্রুফ, মডারেশন ও কোডিং খাতে প্রতি পরীক্ষায় ১২ হাজার ৫০০ টাকা করে কেটে নেওয়া হয়। বড় অঙ্কের ভাউচার তৈরি করে চার্জ আদায় ও শিক্ষার্থীদের অজান্তে অর্থ আদায়, পাশাপাশি বিভিন্ন কার্যক্রমের জন্য অতিরিক্ত অর্থ নেওয়া হলেও তা প্রতিষ্ঠানের তহবিলে জমা হয়নি।
অভিযোগে আরও বলা হয়, ২০১৫ সালে কয়েকটি চুক্তিপত্রের ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হলেও থেকে এখন পর্যন্ত নিয়োগপত্র পাওয়া যায়নি। প্রধান শিক্ষক নিয়মিত বছরে প্রায় ১৭ লাখ টাকার আয়ের দাবি করলেও করদাতা হননি। অথচ, নিজের শিফট অনুযায়ী তারা ঘর ভাড়া ১৬ হাজার টাকা করে নিচ্ছেন, যা সরকারি মানদণ্ডের বাইরে। একই সঙ্গে অতিরিক্ত ভাতা ও ফি বাড়ানো হয়, যা জেলা শিক্ষা অফিসের অনুমোদন পাননি।
প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান অবস্থা নিয়ে অনেক শিক্ষক-কর্মচারী জানান, তাদের সরাসরি জোর করে স্বাক্ষর নিতে হয়েছে, যেখানে প্রধান শিক্ষক বলছেন, ‘এটা চাকরির অংশ; না করলে চাকরি থাকবে না’। প্রকৃতপক্ষে, এ প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘ দিন ধরে বিশ্বাস ও সুনাম অর্জন করলেও, এখন তা ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে বলে তারা মনে করেন।
প্রতিষ্ঠানের বর্তমান প্রধান শিক্ষকের অবর্তমানে বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। তবে কিছু নথিপত্রে দেখা যায়, সম্প্রতি তার স্বাক্ষর রয়েছে। সরকারি পর্যায়েও বিষয়টি নজরে আসায় তদন্ত ও ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অঙ্গীকারের অপেক্ষায় স্থানীয় প্রশাসন।





