রবিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৫, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

কালেক্টরেট স্কুলে অস্থিরতা চরমে: আলিউল করিমকে ঘিরে ৫৩ শিক্ষকের অভিযোগপত্র

রংপুরের কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের আলোচিত শিক্ষক আলিউল করিম প্রামানিকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও অসদাচরণের অভিযোগের কারণে প্রতিষ্ঠানজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক উত্তেজনা এবং অস্থিরতা। প্রথমবারের মতো পদের ভিন্নতা থাকা ৫৩ জন শিক্ষক একযোগে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদানের মাধ্যমে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, যা রংপুরের শিক্ষাক্ষেত্রে একান্তই আজাবমূলক ঘটনা।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, আলিউল করিমের সঙ্গে ক্ষমতার অপব্যবহার, নারী শিক্ষকসহ শিক্ষা কর্মীদের অশোভন আচরণ, বোরকা পরা একজন শিক্ষিকার বিরুদ্ধে সালীনতা বিরোধী মন্তব্য, কর্মচারি বিভাজনের চেষ্টাসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ। এছাড়াও, প্রতিষ্ঠানটিতে ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করে অর্থ আত্মসাতের বিরুদ্ধে নানা প্রশ্ন উঠেছে।

তাদের অভিযোগ, তিনি হাইকোর্টের অবৈধ রায়ের পরে বরখাস্ত শিক্ষককে অবৈধভাবে পুনর্বহাল করেছেন। তার নিজস্ব ছেলেরা সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থাকায় সহকর্মীদের ওপর তার ভয়-ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগও রয়েছে। এ ছাড়াও, অভিযোগ, তিনি দ্রুত ছুটিতে যান এবং তার জন্য বারবার যোগাযোগের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।

এমনকি, বরখাস্ত শিক্ষক আলতাপ হোসেনের বর্তমান অবস্থান নিয়েও বাক্যবাণ চলেছে। তিনি শিক্ষাগত যোগ্যতা ও জালিয়াতির অভিযোগে নানা সময়ে বিতর্কিত হলেও প্রশাসনের দিক থেকে পুনর্বাসন পেয়েছেন, সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তার বিরুদ্ধে ৩৬ লাখ ৭৩ হাজার টাকা বকেয়া থাকা সত্ত্বেও, অর্থ ভাগবাটোয়ারার অভিযোগও চলছে।

অপর দিকে, আটজন সিনিয়র শিক্ষককে অতিক্রম করে নাসিরুল হক মিলনকে সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ দেওয়া ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। মিলন নিজে দাবি করেছেন, তিনি সিনিয়র প্রিয়জনদের সম্মতি নিয়ে এই দায়িত্ব নেন।

পক্ষান্তরে, ৫৩ শিক্ষক জানিয়েছেন যে, দুই বছর ধরে চলা এই অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে স্কুলের শান্তিপূর্ণ পরিবেশের চিহ্ন ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি এখন ১০০ বছরের ঐতিহ্যকে ছাপিয়ে এক অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও অস্থিরতায় পড়ে গেছে।

আলিউল করিমের ২০০৯ সালে সাময়িক বরখাস্ত, ২০১০ সালে সুসম্পন্ন শর্তে বরখাস্ত প্রত্যাহার ও পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে তিনি প্রশাসনিক ক্ষমতা দখলের নানা ঘটনা আলোচিত হয়। গত বছর আগস্টে অধ্যক্ষের উপরে চাপ সৃষ্টি করে তার জোরপূর্বক পদত্যাগপত্র নেওয়া, পরবর্তী সময়ে ব্যক্তিগত ক্ষমতা অর্জন ও জেলা প্রশাসনের সহ-মাধ্যমে প্রশাসনিক পদগুলো দখলের ঘটনায়ও ব্যাপক আলোচনা হয়।

শিক্ষকদের পাঁচ দফা দাবি হলো: ১. আলিউল করিমকে অবিলম্বে সব প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক দায়িত্ব থেকে সরানো, ২. তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্ত, ৩. অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে কঠোর শাস্তি, ৪. স্কুলের শান্তিপূর্ণ ও স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা, এবং ৫. ভবিষ্যতে কোনো অনিয়মকারী যাতে দায়িত্বে আসতে না পারে।

স্থানীয় সচেতন মহল মনে করেন, পূর্ববর্তী জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে এক সময়ের সুনামধন্য এই স্কুলটি দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলার কবলে পড়েছে। দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে দুর্নীতিমুক্ত ও সুশাসনমুখী পরিবেশে ফিরিয়ে আনতে তারা সক্রিয় প্রতিশ্রুতির দাবি জানিয়েছেন।

পোস্টটি শেয়ার করুন