চট্টগ্রামের জাহাজ নির্মাণ শিল্পে আবার নতুন দিক উন্মোচিত হয়েছে। চট্টগ্রামভিত্তিক নেতৃত্বাধীন জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেড এই মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতে তিনটি ল্যান্ডিং ক্রাফট জাহাজ রপ্তানি করেছে। এই শুভক্ষণের ঘটনা ঘটে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে, যখন জাহাজগুলো সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিত্তি Tarসূতায় থাকা প্রতিষ্ঠান মারওয়ান শিপিং লিমিটেডের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
অবস্থানীয় পটিয়া উপজেলার কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী জাহাজ নির্মাণ কারখানার সামনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই জাহাজগুলো দাপ্তরিকভাবে তাদের নতুন অভিবাসে পায়। এই তিনটি জাহাজের নাম দেওয়া হয়েছে মায়া, এমি এবং মুনা। এই জাহাজগুলো মূলত ল্যান্ডিং ক্রাফট, যার দৈর্ঘ্য ৬৯ মিটার, প্রস্থ ১৬ মিটার এবং ড্রাফট ৩ মিটার। আন্তর্জাতিক ক্ল্যাসিফিকেশন সংস্থা বুরো ভারিতাসের মান অনুযায়ী নির্মিত এই জাহাজগুলো ১০ নটিক্যাল মাইল গতিতে চলতে সক্ষম। তারা অত্যাধুনিক ডিজাইন ও প্রযুক্তি দ্বারা নির্মিত, যার ফলে তারা ভারি যন্ত্রপাতি ও মালামাল পরিবহনের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
এই জাহাজগুলোর মধ্যে রয়েছে দুটি ইয়ানমার ইঞ্জিন, ইলেকট্রো-হাইড্রোলিক র্যাম্প উইঞ্চ, উন্নত অ্যাঙ্করিং ব্যবস্থা, ২৪ মিলিমিটারের স্টিল ওয়্যার রোপ, হাইড্রোলিক স্টিয়ারিং ও বিভিন্ন উন্নত নেভিগেশন সরঞ্জাম যেমন সিমরাড এস৩০০৯ ইকো সাউন্ডার, ফুরুনো জিপিএস, নেভিট্রন এনটি-৮৮৮৬ অটোপাইলট ও রাডার। এই বছরেই ওয়েস্টার্ন মেরিন মোট ছয়টি জাহাজ রপ্তানি করছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে, এর আগে জানুয়ারিতে রায়ান নামে একটি ল্যান্ডিং ক্রাফট, আর জুলাইয়ে খালিদ ও ঘায়া নামে দুটি টাগবোট রপ্তানি হয়। এই হিসেবে, এটি ওয়েস্টার্ন মেরিনের ৩৯তম জাহাজের রপ্তানি।
সংস্থাটির সূত্র জানায়, তাদের সঙ্গে মারওয়ানের চুক্তির আওতায় বর্তমানে মোট আটটি জাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে চারটি ল্যান্ডিং ক্রাফট, দুটি টাগবোট এবং দুটি অয়েল ট্যাংকার। এর মধ্যে চারটি ল্যান্ডিং ক্রাফট এবং দুটি টাগবোট ইতিমধ্যে রপ্তানি হয়েছে, আর বাকি দুটি অয়েল ট্যাংকার ২০২৬ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ হস্তান্তর করা হবে। এখন পর্যন্ত, ওয়েস্টার্ন মেরিন ১১টি দেশে ৩৬টি বিভিন্ন ধরনের জাহাজ রপ্তানি করেছে, যার বাজার মূল্য প্রায় ১৩৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর আগে ২০১৭ সালে প্রথম জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতে রপ্তানি হয়।
অনুষ্ঠানে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ আলী আল হমোদি বলেন, দুই দেশের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এই বাণিজ্যিক সম্পর্ক আমাদের বন্ধুত্বকে আরও সুদৃঢ় করবে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের আরও জাহাজ এই বাজারে রপ্তানি হবে।
এছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) প্রশাসক আবদুর রহিম খান, ওয়েস্টার্ন মেরিনের শীর্ষ কর্মকর্তারা ও অন্যান্য অতিথিবৃন্দ।
সাইফুল ইসলাম, ওয়েস্টার্ন মেরিনের চেয়ারম্যান, বলেন, জাহাজ নির্মাণ একটি শ্রমসংবলিত ও উচ্চপ্রযুক্তির শিল্প। এই শিল্পের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে এবং বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনে সাহায্য করবে।
অপরদিকে, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন সোহেল হাসান উল্লেখ করেন, দেশের এই শিল্পের বিকাশের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পুঁজির প্রয়োজন। পর্যাপ্ত বিনিয়োগ পেলে দেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্প বিশ্ববাজারে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন পণ্য সরবরাহ করতে সক্ষম হবে এবং এর মাধ্যমে দেশের রপ্তানি আরও বৃদ্ধি পাবে।





