মঙ্গলবার, ২৫শে নভেম্বর, ২০২৫, ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

প্রিন্সেস ডায়ানার রিভেঞ্জ ড্রেসের মূল্য এখন ৬ লাখ ডলার

প্রিন্সেস ডায়ানার কালো ‘রিভেঞ্জ ড্রেস’ শুধুমাত্র এক দৃষ্টিনন্দন ফ্যাশন স্টেটমেন্টই নয়, এটি তার দৃঢ়তা এবং মানসিক শক্তির প্রতীক হিসেবেও চিরস্মরণীয়। সম্প্রতি এই পোশাকটি আবারও আলোচনায় এসেছে, কারণ প্যারিসের মিউজে গ্রেভাঁ জাদুঘরে অন ঘোষণা করা হয় প্রিয় এই রাজকুমারীর নতুন মোমের মূর্তি, যেখানে তাকে ঐ কালো ‘অফ শোল্ডার’ পোশাকে দেখা গেছে, যার মাধ্যমে তিনি তার ব্যক্তিত্বের এক অদৃশ্য শক্তি প্রকাশ করেছেন। এই পোশাকের গল্পের ইতিহাসে গভীরভাবে ঝঁকে দেখা যায়, এটি ১৯৯৪ সালে তিনি কেনসিংটন গার্ডেনসের সারপেন্টাইন গ্যালারিতে এক নৈশভোজে পরেছিলেন, যা তখন বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এই বিখ্যাত পোশাকের পেছনের গল্প জানার জন্য আমাদের অতীতের দিকে তাকাতে হবে। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে প্রিন্সেস ডায়ানার বিবাহবিচ্ছেদের গুজব ও পরিস্থিতির জটিলতা সবার নজরে আসে। তিনি ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের একমাত্র পুত্র ও সিংহাসনের উত্তরাধিকারী। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর রানি এলিজাবেথের মৃত্যুর পর, মে ২০২৩ সালে তিনি ব্রিটেনের রাজার মর্যাদা লাভ করেন। ১৯৯২ সালে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জন মেজর আনুষ্ঠানিকভাবে চার্লস ও ডায়ানার বিচ্ছেদের ঘোষণা দেন। ১৯৯৬ সালে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ চূড়ান্ত হয়। এক সময়ের জনপ্রিয় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য নিউইয়র্ক টাইমস’ প্রকাশ করে, প্রিন্স চার্লস নিজেই স্বীকার করেছিলেন যে তিনি ডায়ানার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন। ১৯৯৪ সালের ২৯ জুন আইটিভির একটি তথ্যচিত্রে অস্পষ্টভাবে প্রকাশ পায় এই তথ্য, যেখানে প্রিন্স চার্লসের দুর্বলতা উন্মোচিত হয়। এরপরই লন্ডনের সারপেন্টাইন গ্যালারিতে ভ্যানিটি ফেয়ার গালা আয়োজন হয়, যেখানে ডায়ানা ‘রিভেঞ্জ ড্রেস’ নামে খ্যাত কালো অফ শোল্ডার গাউন পরিধান করে উপস্থিত হন। এই পোশাকের গল্পের বোঝাপড়া করতে গেলে আমাদের অতীতের কিছু পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। তখনকার উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে, ১৯৯২ সালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তার দাম্পত্যের বিভাজনের ঘোষণা দেন। সেই সময়ের এক সাক্ষাৎকারে, পিপল ম্যাগাজিনের স্টাইল ডিরেক্টর ব্রিটানি টাউবারিকো বলেন, ডায়ানা জানতেন মানুষের দৃষ্টি তার দিকে থাকবে। তাই তিনি তার পোশাক দিয়ে নিজের বক্তব্য রেখেছিলেন—যদিও তা ব্যক্তিগতভাবে কিছু বলছেন না, পোশাকই সব কিছু প্রকাশ করে দেয়। শোনা যায়, তখন ডায়ানা প্রথমে ভ্যালেনটাইনের এক পোশাক পরার পরিকল্পনা করেছিলেন, কিন্তু শেষ মুহূর্তে তার পছন্দ বদলে এই কালো গাউনটা নির্বাচন করেন। এই ডিজাইনার ক্রিস্টিনা স্ট্যামবোলিয়ানের মতে, তিনি তিন বছর ধরে এই পোশাকটি পরে থাকলেও কখনোই এটি প্রকাশ করেননি। ব্রডওয়ে’র ডায়ানার কস্টিউম ডিজাইনার উইলিয়াম আইভি লং বলেন, ডায়ানা সিদ্ধান্ত নেন যুদ্ধের মতো কঠিন লড়াইয়ে অংশ নিতে, এবং সেই লড়াইয়ের প্রতীক হিসাবে এই সাহসী পোশাকটি পরেন। ১৯৯৭ সালে, ডায়ানা তার ৭৯টি গাউন নিলামে বিক্রি করেন, যেখানে ‘রিভেঞ্জ ড্রেস’ ছিল অন্যতম। এই পোশাকটি স্কটল্যান্ডের একজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ২৪,১৫০ ডলারে কিনে নেওয়া হয়। এই বিক্রয় থেকে মোট ৩০ লাখ ডলার সংগ্রহ করে বিভিন্ন মানবাধিকার ও স্বাস্থ্য সংস্থায় দান করেন। ২০২৩ সালে আবারও এই পোশাকটি নিউইয়র্কে ‘সদবিস’ এর নিলামে ওঠে। চারজন দরদাতা প্রতিযোগিতা করে, অবশেষে এটি ৬ লাখ ৪ হাজার ৮০০ ডলারে বিক্রি হয়। এই ইতিহাসের প্রতীকী পোশাক এখনো বিশ্বের মানুষের হৃদয়ে স্থান করে রয়েছে, যা ডায়ানার ব্যক্তিত্ব ও সাহসের সাক্ষ্য বহন করে।

পোস্টটি শেয়ার করুন