প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রতি নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে ‘ঐতিহাসিক দায়িত্ব’ পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেন, এই নির্বাচনকে দেশের জন্য ‘শত বছরের ভিত্তি নির্মাণের’ গুরুত্বপূর্ণ সময় বলে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ‘ভূমিকম্প হলে আমরা মানে কি না তার জন্য বিল্ডিং কোডের কথা বলি। ঠিক তেমনি এই নির্বাচন আমাদের সমাজের জন্য সেই বিল্ডিং কোড রচনা করার সুযোগ। একটি এই ধরনের কোড তৈরি করতে হবে, যা যত বড় ঝাকুনি আসুক, নড়বে না।’ প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আপনাদের ওপর যে ঐতিহাসিক দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে, তার জন্য আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ হোন। জীবনের শেষেআসেযোগ যদি হয়, তখন সেটি স্মরণ করবে যে, আমরা এই বিল্ডিং কোড তৈরিতে সফল হয়েছি।’ তিনি ৪ ডিসেম্বর সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে দেশের ৬৪ জেলার পুলিশ সুপার ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন।
প্রফেসর ইউনূস বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচন শুধুমাত্র পাঁচ বছরের একটি সাধারণ নির্বাচন নয়, এটি একটি গণভোটও। এই গণভোট হবে আরও বড় বিষয়—এটি সেই ‘বিল্ডিং কোড’ যা আগামী একশো বছর বাংলাদেশের পথ দেখাবে।’ তিনি নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার জন্য এসপিদের পদায়নে দৈবচয়ন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে, যা দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সহজে গ্রহণ করতে আহ্বান জানান। অনুষ্ঠান berlangsungে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব:) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি বক্তব্য রাখেন।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন এবং অনুষ্ঠানের পরিচালনা করেন পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম। প্রধানমন্ত্রী প্রফেসর ইউনূস বলছেন, ‘আসন্ন এই নির্বাচন দিয়ে একটি নতুন বাংলাদেশের জন্ম হবে। আমাদের কাজ হলো যেন আমরা সেই নতুন জাতির জন্মে সহায়তা করি, যেমন একজন দাই বা জন্মদানে সহায়তা করে।’ তিনি আরও বলছেন, ‘বিশ্বে এই নির্বাচন একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। পর্যবেক্ষকরা বাইরে থেকে এসে আমাদের মধ্যে থাকা ত্রুটিগুলি খুঁজতে চাইবে, কিন্তু আমাদের সঠিক, স্বচ্ছ, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর নির্বাচন উপহার দিতে হবে, যা তারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরবে।’
প্রফেসর ইউনূস বলেন, ‘এই নির্বাচন তাদের জন্য একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে। এটি নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর হওয়ায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ সেটাকে অনুসরণ করবে। এটি গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ের নির্বাচন, যেখানে আমরা অংশ নিয়েছিলাম। এই যুদ্ধের স্বপ্ন আমাদের গ্লোবাল স্বপ্নের মধ্যে’ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যে স্বপ্নের জন্য তারা জীবন দিয়েছে, এটিই সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করবে।’ তিনি বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির নির্বাচন পর্যন্ত প্রতিদিন আমাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে, যাতে একটি সুন্দর, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন হয়।সর্বোপরি, পুলিশ কর্মকর্তাদের সৃজনশীলতা ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করার জন্য তিনি আহ্বান জানান, সেরা কর্মদক্ষ কর্মকর্তা স্মারকপ্রাপ্তি পাবেন।
প্রফেসর ইউনূস তখনই অশ্রুসজল হয়ে ওঠেন, যখন তিনি শহীদ ছাত্র শাহরিয়ার খান আনাসের স্মরণে বলেন। আনাসের মা-কে লেখা চিঠির একাংশ উদ্ধৃতি করে তিনি বলেন, ‘আমি স্বার্থপরের মতো বসে থাকতে পারি না। যদি ফিরতে না পারি, তবে আমাকে ক্ষমা করে দিও।’ ওই সময় তিনি নিজেকে আবেগাপ্লুত বলে প্রকাশ করেন। এরপর বলেন, ‘তার (আনাসের) কথাই আমার দায়িত্ব নির্দেশ করে। আমরা নিষ্ক্রিয় থাকতে পারি না। আনাসের স্বপ্ন আমরা বাস্তবায়ন করব, সেটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।’ তিনি পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান, পরবর্তী তিন মাস নিরলসভাবে কাজ করে, আনাসের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিবে। সেই সঙ্গে বোঝান, আনাসের মা-কে লেখা চিঠি নিয়ে থাকতে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ, হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার ইয়াসমিন খাতুন এবং জামালপুরের পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী মোহাম্মদ জাবের সাদেক। এই সময়ের মধ্যে আরও বিভিন্ন সময়ের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের উপস্থিতি ছিল।





