রবিবার, ৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫, ২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

নভেম্বরে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ১২, মূল ঘটনায় নিহত ১৬

নভেম্বর মাসে কমপক্ষে ৯৬টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় অন্তত ১২ জন নিহত এবং ৮৭৪ জন আহত হয়েছেন। এই মাসে বিভিন্ন দাঙ্গা, গণপিটুনি এবং মব সহিংসতার ঘটনায় নিহত হয়েছেন অন্তত ১৬ জন, আহত হয়েছেন ১১ জন। দেশের ১৫টি শীর্ষ গণমাধ্যমের সংবাদ এবং হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে।

সংগঠনটির তথ্য বলছে, নভেম্বর মাসে দেশের বিভিন্ন অংশে রাজনৈতিক সহিংসতার সংখ্যা অক্টোবরের চেয়ে বেড়েছে। অক্টোবর মাসে ৬৪টি সহিংসতার ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন ১০ জন, আহত হন ৫১৩ জন। তবে নভেম্বর মাসে এই সংখ্যাগুলো দ্বিগুণেরও বেশি, যেখানে ৯৬টি সহিংসতার ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১২ জন এবং আহত হন ৮৭৪ জন। বিএনপির অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ, আওয়ামী লীগ, জামায়াত ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংঘর্ষ, গণপিটুনি ও সংঘর্ষের ঘটনা উল্লেখযোগ্য।

নভেম্বরে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হন বিএনপির কর্মী ও নেতাকর্মীরা। তাদের মধ্যে অন্তত ১১ জন নিহত এবং ৫১২ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে সংঘর্ষে আহত ৫২ জন, বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে সংঘর্ষে ৪১ জন, অন্যান্য দলের মধ্যে সংঘর্ষে ১৫৫ জন আহত হয়েছেন। মোট নিহত হয়েছেন ১২ জন, যার মধ্যে বিএনপির ১১ জন এবং জেএসএস দলের এক সদস্য।

নভেম্বরে নারী ও কন্যা শিশু নির্যাতনের ঘটনাও উল্লেখযোগ্য। কমপক্ষে ১৭৭ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৪৮ জন ধর্ষণের শিকার, তাঁদের মধ্যে ২৫ জন (প্রায় ৫২%) ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু বা কিশোরী। গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৩ জন নারী ও কন্যা শিশু, যাদের মধ্যে ২ জনকে ধর্ষণের পরে হত্যা করা হয়। এছাড়া ৩৬ জন নারী ও কন্যাশিশু যৌন নিপীড়নের শিকার হন, যাদের মধ্যে ১১ জন শিশু। জুড়ি দিয়ে বলতে হয়, যৌতুকের জন্য নির্যাতনে ৩ জনের মৃত্যু হয় এবং আরো ৫ জন আহত হন। পারিবারিক সহিংসতার কারণে ২৯ জন নিহত, ৩২ জন আহত এবং ২৪ জন নারীরা আত্মহত্যা করেছেন।

এছাড়াও, নভেম্বর মাসে অন্তত ২৩টি ঘটনায় ৩৬ জন সাংবাদিক শিকার হন নির্যাতন বা হয়রানির। আহত হন ২২ জন, হুমকির মুখে পড়েছেন ১১ জন এবং গ্রেপ্তার হন ১ জন। আরো কিছু মামলায় দুইজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।

সাইবার অপরাধ দমন আইন অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে কমপক্ষে ৭টি মামলায় ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ২৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে এই মাসে তিনটি আঘাতে একজন বাংলাদেশি নিহত এবং চার জন আহত হন বলে হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট জানায়।

সারাদেশে কারাগারে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ৩ জন কয়েদি ও ৯ জন হাজতি। শ্রমিকরা কাজের পরিবেশের অভাবে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ১৪ জন মৃত্যু বরণ করেন এবং মোট ২৫টি শ্রমিক নির্যাতনের ঘটনায় ৪ জন নিহত ও ৭৬ জন আহত হন।

নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলাম বলেন, দেশের বিভিন্ন সহিংসতার মূল কারণগুলোর মধ্যে আধিপত্য বিস্তার, রাজনৈতিক বিরোধ, সমাবেশ কেন্দ্রিক সংঘর্ষ, নির্বাচনী প্রার্থীতা নিয়ে অন্তর্কোন্দল, কমিটি গঠন ও বিভ্রান্তি, চাঁদাবাজি ও স্থাপনা দখল অন্যতম। তিনি আরও যোগ করেন, দেশের আইন শাসন প্রতিষ্ঠা, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া জোরদার এবং মানবাধিকার রক্ষা করতে হলে রাষ্ট্র ও সমাজের সবস্তরে একযোগে উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন