সোমবার, ৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫, ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

ঢাকায় চামড়া শিল্পের প্রযুক্তি প্রদর্শনী শুরু

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা আজ শুরু হলো আন্তর্জাতিক চামড়া শিল্প প্রযুক্তি প্রদর্শনী ‘লেদারটেক বাংলাদেশ’। এই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানে চামড়া শিল্পের সাথে জুতা তৈরির যন্ত্রপাতি, জুতার বিভিন্ন উপাদান, রাসায়নিক দ্রব্য ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক পণ্যসম্ভার প্রদর্শিত হচ্ছে। রাজধানীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার (আইসিসিবি) এক্সপো ভিলেজে বৃহস্পতিবার এই ১১তম আসরের উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। এছাড়া বাংলাদেশের পাশাপাশি চীন, ভারত ও পাকিস্তানের শিল্প সংগঠনের প্রতিনিধিরাও এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, ‘বাংলাদেশে চামড়া শিল্প এখনো তার পূর্ণ সম্ভাবনার দোরগোড়ায় রয়েছে। ‘লেদারটেক’ এর মতো প্রদর্শনী শুধু একটি প্রযুক্তিগত প্রদর্শনীই নয়, এটি আমাদের সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেয়ার এক চমৎকার প্রচেষ্টা। তিনি বলেন, চামড়া শিল্প যে নতুন এক অধ্যায়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছে, এই ধরনের আয়োজন তা প্রত্যক্ষভাবে বুঝিয়ে দেয়। সরকারের উদ্যোগ ও বেসরকারি খাতের সম্মিলিত প্রচেষ্টা হলে বাংলাদেশে চামড়া শিল্প আরও বেশি এগিয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘চামড়া শিল্পে বাংলাদেশ এখন রপ্তানি-ভিত্তিক উৎপাদন দ্রুত বাড়ানোর এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রয়েছে। আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য হলো নীতি সহায়তা ও প্রযুক্তির উন্নয়ন, যাতে প্রতিবেশী দেশগুলো ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে যুক্ত হয়ে শিল্পটির উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হয়।’

বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস ও ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন বলেন, ‘চামড়াজাত পণ্য বর্তমানে আমাদের দেশের একটি সম্ভাবনাময় রপ্তানি ক্ষেত্র। ‘লেদারটেক’ এর মতো আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী আমাদের সেই খাতের অবস্থান শক্তিশালী করতে সহায়ক।

প্রদর্শনী আয়োজক এএসকে ট্রেড অ্যান্ড এক্সিবিশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিপু সুলতান ভূঁইয়া জানান, এবারের আসরে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও চীনসহ মোট আটটি দেশ থেকে প্রায় ২০০ কোম্পানি তাদের পণ্য প্রদর্শন করবে। এ প্রদর্শনীতে যোগ দেয়ার জন্য রয়েছে কাউন্সিল ফর লেদার এক্সপোর্টস ইন্ডিয়া (সিএলই), পাকিস্তান ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (পিটিএ), ইন্ডিয়া ফুটওয়্যার কম্পোনেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (ইফকোমা) এবং চীনের গুয়াংডং সু-মেকিং মেশিনারি অ্যাসোসিয়েশনের (জিএসএমএ) পৃথক পৃথক প্যাভিলিয়ন। পাশাপাশি দেশের প্রধান শিল্প সংগঠনগুলোর সহায়তা ও সমর্থন রয়েছে।

‘লেদারটেক বাংলাদেশ’-এর যাত্রা শুরু ১১ বছর আগে। এর মূল লক্ষ্য ছিল জুতা, ভ্রমণ আনুষাঙ্গিক ও সংশ্লিষ্ট পণ্য উৎপাদন প্রযুক্তি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে নিয়ে এসে দেশের শিল্প উদ্যোক্তাদের কাছে পৌঁছে দেয়া। সময়ের সাথে সাথে এই আয়োজনটি বাংলাদেশের চামড়া, জুতা ও সংশ্লিষ্ট খাতের উদ্ভাবন ও বাজার সম্প্রসারণের অন্যতম বিশ্বস্ত প্ল্যাটফর্মে রূপ নিয়েছে। গত এক দশকে ‘লেদারটেক বাংলাদেশ’ চামড়া শিল্পের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নেটওয়ার্কিং ও পরিচিতির মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত হিসেবে তৃতীয় পোশাক শিল্পের পর, চামড়া এবং জুতা শিল্প গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। এই শিল্প দেশের মোট বিশ্ববাজারের চামড়াজাত পণ্যের ৩ শতাংশ এবং বৈশ্বিক চাহিদার প্রায় ১০ শতাংশ পূরণ করে। শিল্প নীতিতে ২০২২ সালে এই খাতকে বহুমুখী রপ্তানির লক্ষ্যভুক্ত করে, ফলে এটি এখন বৈশ্বিকভাবে শক্তিশালী ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রায় সাড়ে পাঁচশ’ মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ ৫৯১.৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যমানের চামড়া ও জুতা শিল্পের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বজায় রয়েছে। এর ফলে আমাদের রপ্তানি বহুমুখী ও টেকসই হতে চলেছে, এ শিল্পের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হচ্ছে।

প্রদর্শনী চলবে ৪ ডিসেম্বর থেকে ৬ ডিসেম্বর, প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৭টা পর্যন্ত। দর্শনার্থীরা বিনামূল্যে এই প্রদর্শনী উপভোগ করতে পারবেন এবং ব্যবসায়ী ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহ এই সুযোগে নতুন প্রযুক্তি ও পণ্য সম্পর্কে পরিচিত হওয়ার দারুণ সুযোগ পাবেন।

পোস্টটি শেয়ার করুন