মঙ্গলবার, ৯ই ডিসেম্বর, ২০২৫, ২৪শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

নির্ধারিত দামে এলপিজি পাওয়া যাচ্ছে না

বেসরকারি খাতের তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) এর দাম প্রতি মাসে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) দ্বারা নির্ধারিত হয়। তবে ভোক্তাদের অনেকের অভিযোগ, নির্ধারিত দামের বাইরে দামে এলপিজি বিক্রি হয়, ফলে সাধারণ ভোক্তারা অতিরিক্ত মূল্য দিতে বাধ্য হচ্ছে। ভোক্তাদের ভাষ্য, ১২ কেজি সিলিন্ডার কিনতে তারা প্রতি মাসে ১০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত বেশি দিচ্ছেন। ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বাজারে একই দামের থেকে নানা দামে বিক্রি হচ্ছে এই গ্যাসের সিলিন্ডার।

২ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বিইআরসি নতুন মাসিক দাম ঘোষণা করে, যেখানে ১২ কেজির এলপিজির মূল্য নির্ধারিত হয় ১ হাজার ২৫৩ টাকা। আগের মাস নভেম্বরের দাম ছিল ১ হাজার ২১৫ টাকা। মূলত, বিইআরসি প্রতি মাসেই এই মূল্যনির্ধারণ করে থাকেন।

বিশেষ করে গৃহস্থালির কাজের জন্য এই ১২ কেজি এলপিজি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। ভোলার বোরহানউদ্দিন পৌরসভার বাসিন্দা কেয়া হোসেন বলেন, ‘প্রতি মাসেই ১৫০ থেকে ২০০ টাকা অতিরিক্ত দিতে হয়। নভেম্বরের শেষের দিকে ১২ কেজি সিলিন্ডার কিনেছিলেন ১ হাজার ৩০০ টাকায়, সাথে বাসায় পৌঁছে দিতে আরও ৫০ টাকা খরচ হয়েছে।’

বিইআরসি তার আইনাধীন দায়িত্ব পালনে নানান সংকটের মুখোমুখি বলে অভিযোগ ওঠে। আইন অনুযায়ী যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তা ব্যবহার করছে না বলে অনেকের ধারনা। ভোক্তাদের স্বার্থও যথাযথভাবে সুরক্ষিত হচ্ছে না।

ঢাকার কাজীপাড়ার বাসিন্দা ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘নভেম্বরে ১২ কেজি এলপিজির দাম ছিল ১ হাজার ৪৫০ টাকা, তবে বাসায় পৌঁছানোর জন্য আরও ৫০ টাকা দিতে হচ্ছে। এবার দাম বাড়লে তার জন্য আরও বেশি খরচ হবে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন।’ অন্যদিকে, মোহাম্মদপুরের বাসিনী কামরুন্নেছা রুহি বলছেন, ‘গত মাসে ১২ কেজির এলপিজি কিনেছিলেন ১ হাজার ৩০০ টাকায়, যা ফয়সালের চেয়ে সুলভ ছিল।’

২০২১ সালের এপ্রিল থেকে প্রতি মাসে বিইআরসি এলপিজির দাম নির্ধারণ করে আসছে। এর আগে, পরিবেশক ও এলপিজি কোম্পানির মধ্যে এই দাম নির্ধারণ নিয়ে বিরোধ চলছিল। বিইআরসি দামের শর্তে পরিবেশক পর্যায়ে দাম নির্ধারণ করলেও, অনেক সময় কোম্পানিগুলো সেই দামে সরবরাহ করেনি। ফলে, দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য শুল্ক ও খরচ যোগ করে সরবরাহের দায়িত্ব কোম্পানিগুলোর ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে বাজারে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করার অভিযোগ খুব বেশী শোনা যায়নি।

সারা দেশে এলপিজি সরবরাহকারী সমিতির সভাপতি সেলিম খান বলেন, ‘পরিবেশকদের দামে কোন সমস্যা নেই। তবে খুচরা বিক্রেতারা অধিক দামে বিক্রি করে থাকেন, যা আইনত উচিত নয়। এ ব্যাপারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম আরও জোরদার হওয়া প্রয়োজন।’

বিইআরসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, নির্ধারিত দামে এলপিজি বিক্রি এবং বাজারে নজরদারি চালানো খুবই কঠিন। তারা জেলা প্রশাসকদের কাছে চিঠি দিয়ে বাজার মনিটরিংয়ের অনুরোধ করেছে। তবে লাইসেন্সের অভাবে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না বলেও জানানো হয়। বিইআরসির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ জানান, জানুয়ারির মধ্যে সব পরিবেশককে লাইসেন্স নিতে বলা হয়েছে। এরপর তারা খুচরা বিক্রেতাদেরও লাইসেন্স নবায়নের আওতায় আনবেন, যাতে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যায়।

বিইআরসির নতুন মূল্য অনুযায়ী, প্রতি কেজি এলপিজির দাম নির্ধারিত হয়েছে ১০৪ টাকা ৪১ পয়সা, যা গত মাসের তুলনায় ৩ টাকা ১৭ পয়সা বেশি। অন্যদিকে, গুজব কিছুটা রোধ করতে সরকারি কোম্পানির সরবরাহকৃত ১২.৫ কেজির সিলিন্ডার মূল্য অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে ৮২৫ টাকায়। তবে, অধিকাংশ ভোক্তার জন্য এই সরকারি সরবরাহের সুবিধা খুবই সীমিত। এঁরা বাজারের প্রায় ৯৯ শতাংশ এলপিজি সরবরাহ করে থাকেন বেসরকারি খাত।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, ‘বিইআরসি তাদের আইনি দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে না। এই সংস্থার ক্ষমতার পুরো ব্যবহারে তারা অক্ষম। ফলে, ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও বাজার নিয়ন্ত্রণে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে। ক্যাব তার বর্তমান নেতাদের অপসারণের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে দাবি জানিয়েছে।’

পোস্টটি শেয়ার করুন