পটুয়াখালী জেলার দশমিনা উপজেলায় গরু ও মহিষের পালনের মাধ্যমে প্রতিদিনই জায়গাটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নতুন দিশা পাচ্ছে। এই চরাঞ্চলীয় অঞ্চলগুলোতে বর্তমানে হাজারও ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক গবাদিপশু পালন করে নিজস্ব আয় বাড়াচ্ছেন, দারিদ্র্য বিমোচনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে এই খাত। ইতোমধ্যে, গবাদিপশু পালনে নিজস্ব অর্থনীতির ভিত্তি তৈরি হয়েছে, যেখানে অধিকাংশ খামারি ব্যাংকঋণের কোন সাহায্য ছাড়াই নিজস্ব শ্রম ও সীমিত পুঁজি দিয়ে উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছেন। উপজেলায় অন্তত ৫ হাজার ৬২০টির বেশি গরু ও মহিষ উৎপাদিত হচ্ছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই মহিষ—প্রায় ৬৫ শতাংশ—যা অন্য উপজেলার তুলনায় ব্যতিক্রমী। চরাঞ্চলের পরিবেশ মহিষের জন্য অত্যন্ত উপযুক্ত, কারণ তাদের জন্য প্রাকৃতিক চরভূমি ও বিস্তীর্ণ ঘাসের ব্যবস্থা রয়েছে। এমনকি, একটি মহিষ থেকে বছরে প্রায় ১০ লাখ ৫০ হাজার লিটার দুধ ও সাত লাখ ৪০ হাজার কেজি মাংস উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। খামারিদের মতে, এই কাজের কারণে তাদের অর্থনৈতিক জীবনমান উন্নত হয়েছে। চর হাদি এলাকার খামারি আবদুস সালাম জানান, আগে ধান চাষ করেই জীবন জীবিকা চালাতে হতো, কিন্তু এখন গরু ও মহিষের দুধ বিক্রি করে পরিবারের জন্য অভাব অনেকটাই কমে গেছে। তবে এই খাতের সাথে কিছু চ্যালেঞ্জ ও রয়েছে। খামারিরা জানান, পশু কিছুটা অসুস্থ হলে চিকিৎসার জন্য মূলাঞ্চলে যেতে হয়, এতে সময় ও অর্থের ক্ষতি হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চরাঞ্চলগুলো পরিকল্পিতভাবে চারণভূমি হিসেবে ঘোষণা, উন্নত ঘাসচাষ, নিয়মিত টিকাদান, স্বল্প সুদে ঋণ, প্রশিক্ষণ ও বাজারজাতের উন্নতিকরণে কৃষকদের জীবিকা আরো শক্তিশালী হবে। সরকারি ও বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে, দশমিনার চরাঞ্চলগুলো দীর্ঘমেয়াদি গবাদিপশু উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে, যা দারিদ্র্য কমিয়ে কর্মসংস্থান বাড়ানোর পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতেও বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শুভেন্দু সরকার জানান, মহিষের জন্য উপযুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশ ও বিস্তীর্ণ চরভূমি রয়েছে, যা এই অঞ্চলে মহিষের সংখ্যা বৃদ্ধিতে সহায়ক। বিশেষ করে শীতকালে পানির সহজ সরবরাহ ও জীবনচক্রের প্রজনন হার বাড়ানোর জন্য এই স্থানগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় জনগণের প্রত্যাশা, সরকারের সহায়তা ও উদ্যোগের মাধ্যমে এই অঞ্চলের অবহেলিত চরাঞ্চলগুলো গবাদিপশু উৎপাদনের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃতি পাবে, যা দীর্ঘমেয়াদি দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক হবে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখবে।





