শুক্রবার, ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৫, ১১ই পৌষ, ১৪৩২

চট্টগ্রাম শহরে ৮ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় ৬৬২ মৃত্যু: রোড সেফটির রিপোর্ট

চট্টগ্রাম নগরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা দিন দিন উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে চলছে। গত আট বছরে, অর্থাৎ ২০১৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত, কমপক্ষে ৬৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে ছিলেন পথচারীরা। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত ‘চট্টগ্রাম সিটি রোড সেফটি রিপোর্ট—২০২৫’ এ এই তথ্যগুলো বিস্তারিতভাবে উঠে এসেছে।

২১ ডিসেম্বর বুধবার, নগরের দামপাড়া পুলিশ লাইনের সম্মেলন কক্ষে এই প্রতিবেদন উদ্বোধন করা হয়। এটি চট্টগ্রামে পুলিশি তথ্যের ভিত্তিতে তৃতীয়বারের মতো প্রকাশিত একটি সড়ক নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিস্তারিত রিপোর্ট। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম ও অপারেশন) মো. হুমায়ুন কবির। বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ওয়াহিদুল হক চৌধুরী এবং চসিকের প্রধান প্রকৌশলী মো. আনিসুর রহমান সোহেল।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই সময়ের মধ্যে চট্টগ্রাম নগরে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার ২৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে প্রাণহানির সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। যদিও ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই হার স্থিতিশীল রয়েছে, যা নগরের সড়ক নিরাপত্তার দুর্বলতা নির্দেশ করে।

অএ আট বছরে মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে পথচারীদের সংখ্যা ৩৬৩ জন, যা মোট মৃত্যুর অর্ধেকেরও বেশি। এই সময়ে পথচারীদের মধ্যে মৃতের সংখ্যা ৪৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি, দুই ও তিন চাকার যানবাহনের চালক ও আরোহীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে ছিলেন, মোট নিহতের সংখ্যা এই গোষ্ঠীতে ১৯৫ জন।

প্রতিবেদনটি নগরের ২০টি উচ্চঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করেছে, যার মধ্যে রয়েছে বড়পোল মোড়, অলংকার মোড়, সিইপিজেড গেট, সিটি গেট, নিউমার্কেট বাসস্টপ, কালামিয়া বাজার বাসস্টপ ও সাগরিকা গোলচত্বর। এই এলাকাগুলোর সড়ক নির্মাণে দ্রুত বিজ্ঞানভিত্তিক যাচাই-বাছাই করে ত্রুটি সংশোধন ও পুনর্নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে।

পথচারীর নিরাপত্তা আরও নিশ্চিত করতে ফুটপাত প্রশস্ত করা, উঁচু জেব্রা ক্রসিং নির্মাণ, নিরবচ্ছিন্ন ফুটপাত, স্পিড হাম্প ও পথচারী দ্বীপ বসানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া, মোটরযানের গতি নির্ধারণের জন্য ২০২৪ সালের নির্দেশনা বাস্তবায়নের পরামর্শ দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে মো. হুমায়ুন কবির বলেন, সড়ক নিরাপত্তা শুধুমাত্র আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়নের বিষয় নয়, এটি নগর পরিকল্পনা ও সড়ক নকশার সঙ্গেও গভীরভাবে যুক্ত। সিএমপি ইতোমধ্যে রোড সেফটি সেল গঠন করেছে এবং দুর্ঘটনার তথ্য সংগ্রহের জন্য মানসম্মত পদ্ধতি চালু করেছে।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ওয়াহিদুল হক চৌধুরী উল্লেখ করেন, রোড সেফটি সেল দুর্ঘটনার তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণে এখন একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। ভবিষ্যতে এই সেল নিয়মিত সড়ক নিরাপত্তা রিপোর্ট প্রস্তুত করে নীতিনির্ধারক ও নগর পরিকল্পনাবিদদের জন্য দিকনির্দেশনা দেবে।

পোস্টটি শেয়ার করুন