শনিবার, ২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৫, ১২ই পৌষ, ১৪৩২

বিশ্বব্যাংকের ১৫০.৭৫ মিলিয়ন ডলার অনুদান বেকার যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াবে

বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে স্বল্প আয়ের তরুণ ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সম্প্রসারণে ১৫০.৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান অনুমোদন করেছে। এই অর্থায়নের মাধ্যমে বিশেষ করে নারী ও জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার জনগোষ্ঠীর উপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। রিকভারি অ্যান্ড অ্যাডভান্সমেন্ট অব ইনফরমাল সেক্টর এমপ্লয়মেন্ট (রেইজ) প্রকল্পের আওতায় এই অতিরিক্ত অর্থনৈতিক সহায়তার ফলে সারাদেশে আরও প্রায় এক লাখ ষাট হাজারের বেশি যুবক নতুন কর্মসংস্থান ও আয়বর্ধক সুযোগ পাবে। এর আগে এই প্রকল্পের মাধ্যমে দুই লাখ ত্রিশ হাজারের বেশি মানুষ উপকৃত হয়েছেন।

বিশ্বব্যাংকের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, প্রকল্পের অংশগ্রহণকারীরা দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ, শিক্ষানবিশ (অ্যাপ্রেন্টিসশিপ), উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও ক্ষুদ্র ঋণের সুযোগসহ একটি সমন্বিত সেবা প্যাকেজ পাবেন। এর মাধ্যমে যুবক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা নিজের ব্যবসা সম্প্রসারণ ও কর্মসংস্থান স্থাপনে বিভিন্ন বাধা অতিক্রম করতে সক্ষম হবেন।

এছাড়াও, এই প্রকল্পের আওতায় নারীর ক্ষমতায়নে বেশ কিছু উদ্ভাবনী উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে, যার মধ্যে রয়েছে মানসম্পন্ন শিশুযত্ন ও চাইল্ডকেয়ার সেবার বিস্তৃতি। পাশাপাশি জলবায়ু সহনশীল জীবনযাত্রার জন্য নানা কার্যক্রম চালু করা হবে, যা জনগোষ্ঠীর জলবায়ুজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় সহায়তা করবে।

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানবিষয়ক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক গেইল মার্টিন বলেন, ‘একটি ভালো চাকরি একজন জীবন বদলে দিতে পারে, পরিবার ও সমাজের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই প্রতি বছর শ্রমবাজারে নতুন যে তরুণরা প্রবেশ করে, তাদের জন্য উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি।’ তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘এই অতিরিক্ত অর্থায়ন দরিদ্র পরিবারে থাকা যুবকদের জন্য বাজারভিত্তিক দক্ষতা, সম্পদ ও প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি করবে, যা তাদের জীবিকা ও স্বাবলম্বিতা বাড়াতে সাহা্য্য করবে।’

এই অর্থায়নের ফলে প্রকল্প দ্রুত শহরকেন্দ্রিক সীমা থেকে বেরিয়ে গ্রামীণ এলাকায়ও কার্যক্রম বাড়ানো হবে, যাতে প্রান্তিক যুবক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা সমান সুযোগ পেতে পারেন।

নBelow, নারীদের জন্য মানসম্পন্ন ও সাশ্রয়ী মূল্যমানের শিশু যত্ন সেবার একটি পাইলট প্রকল্প চালু করা হবে। এর মাধ্যমে নারীদের জন্য প্রশিক্ষণ ও প্রারম্ভিক অনুদান দেওয়া হবে, যা পরিচর্যা খাতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং শিশুদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য ও বিকাশেও ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।

আত্মবিশ্বাস ও ক্ষমতায়ন বাড়াতে নারীদের জীবনদক্ষতা প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। চাকরি সংক্রান্ত মধ্যস্থতা ও নিয়োগ প্রক্রিয়াকে জোরদার করতে কর্মসংস্থান মেলা ও অন্যান্য উপায়েও সহায়তা করা হবে।

বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র সামাজিক সুরক্ষা অর্থনীতিবিদ ও প্রকল্পের টিম লিডার আনিকা রহমান বলেন, ‘রেইজ প্রকল্প তরুণ ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জীবনে বাস্তব পরিবর্তন আনতে সাহায্য করছে। এই নতুন অর্থায়ন আরও বিস্তৃত কর্মসূচি চালু, ক্ষুদ্রঋণের সুযোগ বাড়ানো ও মানসম্মত শিশুযত্নের মতো উদ্ভাবনী উদ্যোগের জন্য ভিত্তি তৈরি করবে, যা আরও বেশি যুবক ও নারীর সক্ষমতাকে কাজে লাগাতে সহায়তা করবে।’

প্রকল্পটি ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষানবিশরা ৮০ শতাংশের বেশি তিন মাসের মধ্যেই কর্মসংস্থান পেয়েছেন। তরুণ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাগুলিও তাদের ব্যবসা ও আয় বৃদ্ধির জন্য ইতিবাচক ফলাফল দেখিয়েছেন।

২০২১ সালে সূচনা হওয়ার পর থেকে, রেইজ প্রকল্প কোভিড-১৯ মহামারীর ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ৫০,০০০ এর বেশি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাকে পুনরুদ্ধার ঋণ ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি ২ লাখ ৫০ হাজারের বেশি প্রবাসীকে পুনঃসমাজে ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করেছে। এর পাশাপাশি, ১ লাখ ২২ হাজারের বেশি উপকারভোগীকে অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তিমূলক সেবা প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৫ শতাংশই নারী।

এই অতিরিক্ত অর্থায়নের ফলে, বিশ্বব্যাংকের সহায়তা মূল প্রকল্পের মোট পরিমাণ দাঁড়াল ৩৫০.৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

পোস্টটি শেয়ার করুন