নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বর্তমানে গুরুতর চিকিৎসক সংকট দেখা দিয়েছে। এর ফলে দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা প্রয়োজনমতো চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না, আর এতে তারা ব্যাপকভাবে অনেক দুর্ভোগের মুখোমুখি হচ্ছেন। এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ১৯৬০ সালে ঢাকা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে প্রতিষ্ঠিত হয়, যেখানে শুরুতে মাত্র ৩১ শয্যার ব্যবস্থা ছিল। ২০০৬ সালে সেটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও, জনবল সংকটের কারণে হাসপাতালের সেবার মান অনেকটাই নামে যায়। বর্তমানে যদিও অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে, তবুও সেবা কার্যকারিতা অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত।
হাসপাতালের তথ্য বলছে, জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি ও অবস) ডাক্তারের বদলি হওয়ার পর থেকে গত দুই বছর ধরে পদটি খালি রয়েছে। একইভাবে, ইএনটি, চক্ষুবিদ্যা ও অর্থোপেডিক্সে জুনিয়র কনসালটেন্ট নেই। ডাক্তারের বদলি বা অবসরজনিত কারণে এসব পদ দীর্ঘ সময় ধরে শূন্য রয়েছে। এছাড়াও, ১৭ জন মেডিকেল অফিসার পদের জন্য দায়িত্ব পালন করছেন মাত্র ৫ জন, নার্সের মধ্যে দায়িত্ব পালন করছে ৮ জনের পরিবর্তে ২১ জনের কাজ, মিডওয়াইফের দায়িত্বে ১ জন থাকলেও প্রয়োজন আরও বেশি। তিনটি নৈশপ্রহরীর মধ্যে একজনের বেশি নেই এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজে নিয়োজিত কর্মীদের সংখ্যা মাত্র চারজন, যেখানে প্রয়োজন আরও বেশি। সবমিলিয়ে জনবল সংকটের কারণে সরকারি এই হাসপাতালটি যেন জোড়াতালি দিয়ে চলছে।
সুরক্ষা নিয়েও রয়েছে নানান সমস্যা। হাসপাতালের চারপাশে প্রাচীর বা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। চুরি ছাড়াও সন্ধ্যার পর মাদকসেবী, বখাটে ও অশান্ত কিছু লোকজনের কারণে হাসপাতাল এলাকা অনিরাপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক রোগীর স্বর্ণ ও মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি হয়ে যাচ্ছে। হাসপাতালের মূল ভবন ও আবাসিক কোয়ার্টারের দরজা, জানালা, গ্রিল চুরি হয়ে যাওয়ার অভিযোগও উঠেছে।
রোগীদের অভিজ্ঞতা বলছে, গাইনি ডাক্তার না থাকায় অনেক রোগী আবার ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। নাজমা বেগম নামে একজন বলেন, ‘আমি গাইনি বিশেষজ্ঞের কাছে চিকিৎসার জন্য এসেছি। কিন্তু ডাক্তার না থাকায় আমাকে ফিরে যেতে হলো।’ এ অবস্থায় দ্রুত শূন্যপদে জনবল নিয়োগের দাবি উঠছে।
কালিকাপুর গ্রামের সহিদ উল্লাহ জানান, ‘তাঁর স্ত্রী রজিনা আক্তারকে গাইনি বিশেষজ্ঞ দেখানোর জন্য হাসপাতালে এনেছিলেন, কিন্তু ডাক্তার না থাকায় প্রাইভেট হাসপাতালে যেতে বাধ্য হন।’
হাসপাতালের আরএমও ডাক্তার রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘অসংখ্য শূন্যপদ থাকায় রোগীদের চিকিৎসায় সমস্যা হচ্ছে। ডাক্তার সাদিক, তাহামিনা, রাফাত, সৌরভ ও মাসুদ দায়িত্ব পালন করছেন। তবুও চিকিৎসা দিতে গিয়ে অনেকটা কষ্টে পড়তে হচ্ছে।’
সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ইসরাত জাহান বলেন, ‘বিশেষজ্ঞ এবং মেডিকেল স্টাফের অভাবের জন্য গাইনি বিভাগ বন্ধ। নিরাপত্তার অভাবে আবাসিক কোয়ার্টারেও থাকাটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। প্রায়ই রোগীর সোনা-জিনিস ও অন্যান্য মালামাল চুরি হয়।’
নোয়াখালী জেলার সিভিল সার্জন ডাক্তার মরিয়ম সিমি ও বলেন, ‘ডাক্তার ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর সংকট দীর্ঘদিনের, আমরা বিভিন্নবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছি। কম লোকবল নিয়োজিত থাকায় স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছি।’





