বহু বিশ্বনেতা নানারকম কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলো অতিবাহিত করেছেন। নির্বাসন, দীর্ঘ কারাবাস অথবা নিপীড়নের মুখে পড়ে থাকলেও তারা কখনোই তাদের আদর্শ থেকে দূরে সরে যাননি। বরং প্রতিপক্ষের দমন–পীড়ন কিংবা দেশের বাইরে নির্বাসিত জীবন কাটানোর পর ফিরে এসেছেন মূল মঞ্চে, নিজেদের দেশের স্বপ্ন দেখেছেন আবারো। তাদের এই সাহসী প্রত্যাবর্তন ও দৃঢ় মনোবল দ্বারা তারা নতুন ইতিহাস রচনা করেছেন। আজ তারই কয়েকজন নেতার গল্প শুনে নেওয়া যাক, যাঁরা ফিরে আসার মাধ্যমে বিশ্বে তাদের নাম আরও উজ্জ্বল করেছেন:
বেনজির ভুট্টো (পাকিস্তান): পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অমোঘ নাম বেনজির ভুট্টো। আশির দশকে, যখন দেশজুড়ে স্বৈরশাসন আর নিপীড়ন চলছিল, তখন পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউল হকের শাসনামলে রাজনীতির হাওয়া সরে গেলেন তিনি। রাজনীতির মাঠ থেকে দুর্ভাগ্যবশত দেশ ত্যাগ করতে হয় তাঁকে, তবে নির্বাসিত থাকাকালে তিনি পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতৃত্ব ধরে রাখেন এবং আন্দোলন চালিয়ে যান। ১৯৮৮ সালে দেশে ফিরে, সাধারণ নির্বাচনে জয় লাভের মাধ্যমে তিনি পাকিস্তানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইতিহাস গড়েন। তার এই প্রত্যাবর্তন আর নেতৃত্বে পাকিস্তানের গণতন্ত্রের প্রবাহ আবার প্রবল হয়।
রুহুল্লাহ খোমেনি (ইরান): ইরানের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন লড়াই করেছেন আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি। ১৯৬৪ সালে শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে দেশ ত্যাগে বাধ্য হন তিনি। তুরস্ক, ইরাক ও ফ্রান্সের নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে দেশপ্রেমে উদ্বেলিত হয়ে ১৯৭৯ সালে ইরানে ফিরে আসেন। এরপরই শুরু হয় ইসলামী বিপ্লবের অগ্নিপরীক্ষা, যেখানে তিনি নেতৃত্ব দেন। শাহের পতনের পরে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে, তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতৃত্বে আসেন এবং তার নেতৃত্বে দেশ নতুন এক যুগে প্রবেশ করে।
ভ্লাদিমির লেনিন (রাশিয়া): রাশিয়ার ইতিহাসে বিপ্লবের মহান নেতা ভ্লাদিমির লেনিনের নাম অমোঘ। জার শাসনের বিরুদ্ধে তাঁর আন্দোলনে বহুবার গ্রেপ্তার ও নির্বাসিত হতে হয়েছিল। সাইবেরিয়া থেকে ইউরোপ–আঙ্কটক্ষা পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় তিনি বহন করে ছিলেন বিপ্লবের আভা। ১৯১৭ সালে রাশিয়ায় ফিরে এসে উল্টো বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন এবং তার পরে সোভিয়েত ইউনিয়নের পথ ধরে বিশ্বনেতা হয়ে ওঠেন। তার এই প্রত্যাবর্তন দুনিয়াকে দেখিয়ে দিল, দৃঢ় মনোবল করলে অসম্ভব কিছুই নয়।
নেলসন ম্যান্ডেলা (দক্ষিণ আফ্রিকা): আধুনিক বিশ্বের অন্যতম নেতার নাম নেলসন ম্যান্ডেলা। বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের নেতা হিসেবে তিনি ১৯৬৪ সালে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড লাভ করেন। দীর্ঘ ২৭ বছর জেলজীবন কাটানোর পর ১৯৯০ সালে তিনি মুক্তি পান। তার নেতৃত্বে শান্তিপূর্ণ আলোচনা ও সংগঠনবাজি মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী শাসনের অবসান ঘটে। ১৯৯৪ সালে দেশটির প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন এবং নতুন মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেন। তার এই সংগ্রাম আজও বিশ্বে উদাহরণ হিসেবে রয়ে গেছে।





