শনিবার, ২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৫, ১২ই পৌষ, ১৪৩২

নাইজেরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযান শুরু

উত্তর-পশ্চিম নাইজেরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে শক্তিশালী ও প্রাণঘাতী হামলার ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, এই জঙ্গি গোষ্ঠীটি মূলত নিরীহ খ্রিস্টানদের নিশানা করে তাদের নির্মমভাবে হত্যা করছে, যা বিশ্ববাসীর জন্য দুঃখজনক ও উদ্বেগের বিষয়। ট্রাম্প আরও জানান, মার্কিন সেনাবাহিনী কয়েকটি নিখুঁত ও কার্যকরী হামলা চালিয়েছে, যা সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে জঙ্গিদের দুর্বল করে দিতে সক্ষম হয়েছে। এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আফ্রিকা কমান্ড (আফ্রিকম) জানিয়েছে, নাইজেরিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে বৃহস্পতিবার সোকোতো রাজ্যে একটি বড় অভিযান পরিচালিত হয়। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউসুফ মাইটামা বিবিসিকে বলেছেন, এই যৌথ অভিযানটি ছিল সন্ত্রাসবিরোধী এক সঙ্গীকার্য, যেখানে কোনও ধর্মের ওপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট করে আক্রমণ হয়নি। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, ভবিষ্যতেও অন্যান্য অভিযান চালানোর সম্ভাবনা উড়িয়েছেন না, তবে সিদ্ধান্তটি নির্ভর করছে দুই দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের ওপর। ট্রাম্প বুধবার রাতে সোশাল মিডিয়ায় লেখেন, ‘আমার নেতৃত্বে আমাদের দেশ কোনভাবেই চরমপন্থি ইসলামী সন্ত্রাসবাদকে মাথা তুলে দাঁড়াতে দেবে না।’ বিবিসি উল্লেখ করেছে, গত নভেম্বরে ট্রাম্প নাইজেরিয়ায় ইসলামপন্থি জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর মোকাবিলার জন্য মার্কিন সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন, যদিও তখন তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু ডানপন্থি মহলে নাইজেরিয়ায় খ্রিস্টানদের ওপর গণহত্যার অভিযোগ উঠলেও, দেশের জনসংখ্যার প্রায় সমান সংখ্যক মুসলমান ও খ্রিস্টান থাকায় এই বিষয়ে পার্থক্য সমানভাবে স্বচ্ছ নয়। নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট মোহন মি বোলো টিনুবু বলেন, জিহাদিদের বিরুদ্ধে মিলিতভাবে কাজ করাটা জরুরি; তবে এটি দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। তিনি উল্লেখ করেন, ইসলামপন্থি বিদ্রোহীরা কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষকে টার্গেট করছে না; তারা সব ধর্ম ও নিঃসন্দেহে নিরীহ মানুষকে মারার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ। এর পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট টিনুবু বলেছেন, দেশের মধ্যে ধর্মীয় সহনশীলতা সূচক থাকলেও, নিদারুণ নিরাপত্তা সংকট সব ধর্মের মানুষের উপর প্রভাব ফেলেছে। ট্রাম্প আগে ঘোষণা দিয়েছিলেন, নাইজেরিয়াকে তিনি ‘বিশেষ উদ্বিগ্নের দেশ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এবং বলেছিলেন, হাজারো খ্রিস্টান ইতোমধ্যে হত্যার শিকার হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত যখন কোন দেশে গুরুতর ধর্মীয় লঙ্ঘন ঘটে, তখন কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। টিনুবুর উপদেষ্টা ড্যানিয়েল বোলো বলেন, নাইজেরিয়ার সরকার জিহাদিদের বিরুদ্ধে সার্বভৌমত্বের স্বার্থে বিভিন্ন সামরিক পদক্ষেপে সহযোগিতা পেয়ে স্বস্তি বোধ করছে, তবে এটি একান্তই দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়। তিনি মনে করেন, জিহাদিরা ধর্মের সীমা মানে না; তারা সব ধর্মের মানুষের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে এবং নিরীহ জীবন নেওয়ার কলাকৌশল চালিয়ে যাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট টিনুবু অভিমত ব্যক্ত করেন, নাইজেরিয়ায় ধর্মীয় সহনশীলতা রয়েছে এবং কোন সংকটই সব ধর্ম ও অঞ্চলের মানুষকে বিচ্ছিন্ন বা বিভক্ত করতে পারে না। ট্রাম্প এর আগে ঘোষণা দিয়েছিলেন, নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে ঘোষণা করে তার সরকার এই পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝিয়েছে, যেখানে প্রমাণ ছাড়াই তিনি দাবি করেন, হাজারো খ্রিস্টান ইতোমধ্যে নিহত হয়েছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, কোন দেশ যদি গুরুতর ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘনের শিকার হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ কড়া পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত থাকে। টিনুবু আরও বলেছিলেন, তার সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে বদ্ধপরিকর যাতে সব ধর্মের মানুষ নিরাপদ থাকতে পারে। উত্তর-পূর্ব আফ্রিকায় বোকো হারাম ও আইএস ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রদেশের মতো জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ব্যাপক সহিংসতা চালাচ্ছে, যা হাজার হাজার প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। তবে বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, নিহতের বেশিরভাগই মুসলমান। মধ্য নাইজেরিয়ার পানি ও চারণভূমির দখল নিয়ে মুসলিম পশুপালক ও খ্রিস্টান কৃষকদের মধ্যে নিয়মিত সংঘর্ষ চলে। এই সহিংসতায় বহু মানুষ প্রাণ হারালেও, মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলে থাকে যে নিরীহ খ্রিস্টানদের টার্গেট করাও একটি যথাযথ নয়। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে বিশাল আক্রমণের ঘোষণা দেয়। মার্কিন সেনা ও জোটের বিমান ও ট্যাংক ব্যবহার করে মধ্য সিরিয়ার বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে ৭০টির বেশি আঘাত হয়েছে, যাতে জর্ডানের বিমানও অংশ নিয়েছে। এই অভিযানে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আরও দৃঢ় হয়েছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন