সোমবার, ২৯শে ডিসেম্বর, ২০২৫, ১৪ই পৌষ, ১৪৩২

এনসিপি থেকে পদত্যাগ করলেন ডা. তাজনূভা জাবীন

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর অভ্যন্তরে চলমান অস্থিরতা আরও গভীর হয়ে উঠেছে। দলটির সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারার পদত্যাগের খবর উড়ে যাওয়ার একদিনের মধ্যেই এবার দলটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাজনূভা জাবীন তার পদ থেকে সরে দাঁড়ালেন। আজ রোববার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে এক দীর্ঘ ও আবেগঘন পোস্টের মাধ্যমে তিনি তার অবসান ও দল ছাড়ার ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে তিনি আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্তও জানিয়েছেন।

ডা. তাজনূভা জাবীন তার পদত্যাগের পেছনের কারণ হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে এনসিপির জোটের প্রক্রিয়া এবং দলের নেতাদের অগণতান্ত্রিক আচরণকে উল্লেখ করেছেন। তিনি মনে করছেন, এই জোটের উদ্যোগ একধরনের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের ফল। তিনি অভিযোগ করেন, এনসিপির শীর্ষ নেতারা বড় ধুমধাম করে ১২৫ জন প্রার্থী নির্বাচনের ঘোষণা দিলেও, নীচের অংশে দেখা গেছে মাত্র ৩০টি আসনের জন্য জামায়াতের নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে, এর ফলে আরও অনেক প্রার্থী নিরপেক্ষভাবে নিজেকে প্রমাণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তাদের জন্য পথ বন্ধ হয়ে গেছে।

নেতৃত্বের দুর্নীতিপূর্ণ ও স্বৈরাচারী আচরণের কঠোর সমালোচনা করে ডা. তাজনূভা বলেন, “এক শীর্ষ নেতা অন্য শীর্ষ নেতাকে মাইনাস করার জন্য যে রাজনৈতিক কৌশল অবলম্বন করছে, তা অত্যন্ত ভয়ংকর।” তিনি জানান, এনসিপি যে নতুন রাজনৈতিক উপায় ও মধ্যপন্থার কথা বললেও, শীর্ষ নেতৃত্ব ব্যক্তিগত স্বার্থে সেই আদর্শকে বিসর্জন দিয়েছেন। এদিকে, যেখানে চরমোনাই পীরের দল ইসলামি আন্দোলন জামায়াতের কাছ থেকে ৭০টি আসন লাভ করেছে, সেই দলের তুলনায় এনসিপি মাত্র ৩০টি আসনে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে, যা জুলির রাজনীতির বড় ধরনের ব্যর্থতা বলে মনে করেন তিনি।

বিশ্লেষকদের মতে, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে থাকলেও এখন তাকে ‘বহিরাগত’ বা ‘অরাজনৈতিক’ বলে দৃষ্টি فيه করা হচ্ছে। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, বহু ফলোয়ার সম্পন্ন নেতা বারবার নীতির বাইরে গিয়ে রাজনৈতিক স্বার্থে দলের ক্ষতি করছেন, অথচ তার জন্য কোনো জবাবদিহিতা নেই। ঠিক উল্টো, যারা আদর্শের সঙ্গে থাকতে চান, তাদেরকে ‘আবেগী’ বলে বাদ দেওয়া হয়। তাজনূভা মনে করেন, এনসিপি এখন সেই বিপ্লবের স্পিরিট হারিয়ে ফেলেছে; বরং জুলাইয়ের অভ্যুত্থানকে কেবল ক্ষমতায় আসার একটা সরণি হিসেবে ব্যবহার করছে।

নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে তিনি বলেন, আজ তার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার কথা থাকলেও নেতাদের ভণ্ডামিপূর্ণ আচরণের কারণে তা আর করতে পারলেন না। তার মা চট্টগ্রাম থেকে তার নির্বাচনের জন্য আসলেও, ইচ্ছার বিজয় না হওয়া ও দলের মধ্যে দুর্নীতির কারণেই এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হলো। তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন, জনসমর্থনের প্রতিটি টাকা তিনি ফেরত দেবেন এবং এর প্রক্রিয়া শীঘ্রই বিস্তারিত জানাবেন।

ডা. তাজনূভা স্পষ্ট করে বলেন, তার প্রবল আকাঙ্ক্ষা ও সংগ্রাম लोकतন্ত্রের জন্য অব্যাহত থাকবে, যদিও তিনি এনসিপি ছাড়ছেন। তার এই পদত্যাগ ও জামায়াতের সঙ্গে জোটের ঘটনা দলটির ভবিষ্যৎ ও আসন্ন নির্বাচনের ফলাফলে বড় ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। মূলত, নতুন রাজনীতির স্বপ্ন দেখিয়ে যাত্রা শুরু করা এনসিপিতে এখন গভীর বিভাজন ও ফাটল দেখা দিয়েছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন