জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও গভীর হয়ে উঠেছে। এই অস্থিরতার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন ৮ দলের জোটের সাথে আসন সমঝোতার খবর, যা দলটির মধ্যে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। এই পরিস্থিতিতে দলটির সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা পদত্যাগ করেছেন, যা একেবারে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আর এখন, জামায়াতের সাথে রাজনৈতিক সখ্য বা জোটে যাওয়ার বিরোধিতা করতে দলের ৩০ জন শীর্ষ নেতা একটি বিশাল চিঠি পাঠিয়েছেন। আজ শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) রাত ৮টায়, দলের মিডিয়া সম্পাদকের মাধ্যমে এই খবর নিশ্চিত করেছেন মুশফিক উস সালেহীন, যিনি যুগ্ম সদস্যসচিবও।
চিঠিতে নেতারা নাহিদ ইসলামকে আবেদন জানিয়েছেন, এই জোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকতে, কারণ দলের মৌলিক নীতিমালা ও মূল্যবোধের সঙ্গে বারবার আপস করা যাবে না। তারা স্পষ্ট করেছেন যে, কোন কৌশলগত কারণে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার নিষ্ঠা বা দলের মূল আদর্শের সঙ্গে আপস করা ঠিক নয়। নেতারা দ্রুত ও স্পষ্টভাবে দলের বিভিন্ন নেতা ও সদস্যদের এই বিষয়ে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
চিঠিতে আরও অভিযোগ আনা হয়েছে যে, জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন শিবিরসহ অন্যান্য সংগঠনের বিরুদ্ধে একের পর এক গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে গত এক বছরে এই সংগঠনগুলো দেশজুড়ে বিভাজন সৃষ্টি করেছে, গুপ্তচরবৃত্তি ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তুলেছে। এনসিপির নেতা-নেত্রীরা অভিযোগ করেছেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের সমর্থিত প্রার্থী ও তাদের অনলাইন অপপ্রচার নারীর চরিত্রহননের চেষ্টা চালিয়েছে এবং ধর্মের নামে সামাজিক ফ্যাসিবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এছাড়াও, নেতারা স্মরণ করেছেন ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের স্বৈরাচারী ভূমিকা ও গণহত্যার ইতিহাস, যা বাংলাদেশে অঙ্গীকারবিরোধী ছিল। তারা মনে করেন, মানবাধিকার, ধর্মীয় সহনশীলতা, নারীর সমান অধিকার ও সংখ্যালঘুর নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এনসিপির নৈতিক অবস্থানকে এক কথায় কলহের সৃষ্টি করে এই জোটে যাওয়া দলটির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, পাশাপাশি দেশের জনগণের বিশ্বাস হারানোর আশঙ্কা বাড়বে।
পূর্বে, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব একাধিকবার ৩০০ আসনে এককভাবে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। ড. ইউনূসের সহকারী ও দলটির আহ্বায়ক নিজেও একবার ফেসবুকে জামায়াতের দ্বিচারিতা উন্মোচন করেছিলেন। চারিত্রিক পরীক্ষার পরে, দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় মনোনীত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করার পর, শেষ পর্যন্ত কিছু আসনের জন্য জোটে যাওয়াকে দলটির এক নেতারা ‘জনতার সাথে প্রতারণা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
প্রেসনির্মিত এই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক নেতারা, যাঁরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন। এতে যুগ্ম আহ্বায়ক অর্পিতা শ্যামা দেব, নুসরাত তাবাসসুমসহ আরও অনেকেনের নাম রয়েছে। এই ঐক্যবদ্ধ অবস্থান এনসিপির ভবিষ্যৎ রাজনীতি ও সাংগঠনিক পথে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিয়েছে বলে মনে করছে বিশ্লেষকরা। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে এই আদর্শিক বিভাদের কারণে দলটির ভেতরকার সংকট স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, যা জনসম্মুখে এনসিপির ভাবমূর্তির জন্য একটি বড় সতর্কবার্তা।





