পাবনার চলনবিল অঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান হলো ফরিদপুর উপজেলা। এই অঞ্চলটি মূলত উচ্চ মানের দুগ্ধজাত পণ্য যেমন ঘি ও ছানা, তাঁতশিল্প এবং কৃষিপণ্য জন্য পরিচিত। দীর্ঘদিন ধরে এই উপজেলাটি পাবনা জেলা শহর থেকে অনেক দূরে অবস্থিত ও অবহেলিত একটা অঞ্চল হিসেবে পরিচিত ছিল। এই অবস্থায় উন্নয়ন, শিক্ষা, আইনি সেবা ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি ছিলেন এখানকার মানুষ। বিশেষ করে, ভূমি সেবা, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যয় ভেজাল, অবৈধ খাস জমি দখল, মাদক ব্যবসা, বাল্যবিবাহ ও ইভটিজিংসহ নানা অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান প্রয়োজন ছিল। এসব কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলায় দায়িত্বশীল ও সাহসী একজন তরুণ কর্মকর্তার দৃষ্টান্তমূলক ভূমিকা প্রশংসার দাবি রাখে। তিনি হচ্ছেন সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সানাউল মোর্শেদ। ১৬ মাস আগে, ১লা জুলাই ২০২4 সালে তিনি ফরিদপুরে এসিল্যান্ড হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই তিনি ফরিদপুর পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন পাশাপাশি পুংগলী ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক, বনওয়ারীনগর বণিক সমিতির সভাপতি হিসেবে তার দায়িত্ব সাধ্যের মধ্যে রাখছেন। বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের মাধ্যমে তিনি নজরদারি চালাচ্ছেন, যেমন অনলাইন সনদ, মশক নিধন অভিযান, সড়ক বাতি ও পুরনো মাঠ সংস্কার, প্রেসক্লাব ও শিশুবিনোদন পার্ক নির্মাণ। গত ১৬ মাসে তিনি ৯৬টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে বিভিন্ন অপরাধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেন। এর মধ্যে ২৪ জনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে এবং ৩১ লাখ ২২ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এর পাশাপাশি, প্রায় ১২,০০০ মামলার নিষ্পত্তি সম্পন্ন হয়েছে। ভূমি উন্নয়ন, বকেয়া রাজস্ব সংগ্রহ ও খাল দখল মুক্ত করতে তিনি ব্যাপক সফলতা দেখিয়েছেন। চলতি বছরেই তিনি এক কোটি ու আশি লাখের বেশি টাকা রাজস্ব আদায় করেছেন। ভুক্তির জন্য বকেয়া লিজ নবায়নে ১৬ লাখ ৩২ হাজার টাকা, হাটবাজারের রাজস্ব থেকে ১৫ লাখ টাকা আদায়, কৃষি ও অকৃষি খাস জমির অবৈধ দখল উদ্ধার করে আনুমানিক মূল্য প্রায় ১২ কোটির সম্পদ উদ্ধার করেছেন। এছাড়া, ১৬ লাখ ৩২ হাজার টাকা খাল দখল মুক্ত করে সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিত করেছেন। একজন ভূমি সেবা গ্রাহক মো. ঝন্টু মিয়া বলেন, আমি আমার নামজারীর জন্য আবেদন করেছিলাম, এবং খুব দ্রুত সেটি পেয়ে গেছি। অন্য একজন গ্রাহক মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, আমার মামলাটি খুব সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে এবং এসিল্যান্ড সাহেব সকল কাগজপত্র যাচাই করে সঠিক রায় দিয়েছেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মো. সানাউল মোর্শেদ বলেন, আমি চাই এই অবহেলিত ফরিদপুর উপজেলা সব দিক থেকে এগিয়ে থাকুক। সাধারণ মানুষ যেন কোনভাবেই হয়রানি না হয়, এ জন্য আমি নিজেকে দায়বদ্ধ মনে করি। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করা অর্থ সাধারণ সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য, শাস্তির উদ্দেশ্য নয়। তবে, একাই এই অপরাধ রোধ সম্ভব নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন, সবাই আইনের প্রতি সম্মান দেখিয়ে সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধি করলে অপরাধ কমে আসবে।





