মঙ্গলবার, ৩০শে ডিসেম্বর, ২০২৫, ১৫ই পৌষ, ১৪৩২

নির্বাচনে নাশকতার জন্য সীমান্ত থেকে অস্ত্র প্রবেশের আশঙ্কা

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সীমান্তের ওপার থেকেই অস্ত্র পাচার হচ্ছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সূত্রের খবর পাওয়া গেছে। কলকাতায় অবস্থানরত কিছু পলাতক রাজনৈতিক নেতা ও সন্ত্রাসী এই অস্ত্র চক্রের মূল নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করছে। তাদের নির্দেশনায় দেশের বিভিন্ন সীমান্তে সক্রিয় হয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট, যারা অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাচারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

সূত্রগুলো জানায়, প্রথমে এসব অস্ত্র পশ্চিমবঙ্গের মালদা ও মুর্শিদাবাদে সংগ্রহ করে পরে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করানো হয়। পাচারকারীরা সাধারণত সবজি ও ফলের চলাচল ব্যবহার করে অস্ত্রবাহী ট্রাক বা চালান পাঠায়, যেখানে বেশিরভাগ বহনকারীর বয়স কিশোর ও যুবকদের মধ্যে। গোয়েন্দাদের দাবি, এই অস্ত্র চোরাচালান নেটওয়ার্কের সঙ্গে রাজশাহী, রঘলীগঞ্জ ও পদ্মা নদীর সীমান্ত সংলগ্ন এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা জড়িত থাকলেও, মামলায় তদন্তের কারণে তারা ভারতে পালিয়ে গেছে। সেখান থেকেই তারা বাংলাদেশে থাকা অনুসারী ও সহযোগীদের মাধ্যমে এই অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

অতিরিক্ত সূত্র বলছে, স্থানীয় ক্ষমতাশীল কিছু নেতার ব্যাপারে অভিযোগ থাকলেও, এখন কেউ দেশে ফিরেছেন আবার কেউ বিদেশ থেকেও এই নেটওয়ার্ক পরিচালনা করছে। অনেকেই কারাগারে থাকলেও যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।

গত শুক্রবার হবিগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান চালিয়ে গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) অস্ত্র ও ওয়াকিটকি সেট উদ্ধার করেছে। হবিগঞ্জ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. তানজিলুর রহমান জানিয়েছেন, সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই আমাদের প্রধান দায়িত্ব। অবৈধ চোরাচালান ও মাদকদ্রব্যের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযান চলমান থাকবে।

অপরদিকে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা সীমান্তে চালানো আরেকটি অভিযানে বিজিবি একটি ভারতীয় পিস্তল, তাজা গুলি ও দেশের তৈরি বেশ কিছু অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করে। এ সম্পর্কে খেদাছড়া ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুহা. শাহীনূল ইসলাম বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সীমান্তে এ ধরনের অভিযান চালানো হয়েছে। বিজিবি অবৈধ অস্ত্র ও অনুপ্রবেশ রোধে সর্বদা সতর্ক এবং এ ধরণের অভিযান ভবিষ্যতেও চলবে।

এর আগে, শিবার্গের চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্তে চলাচলরত সময় দুই বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন ও গুলির রাউন্ড উদ্ধার হয়। সংশ্লিষ্টরা জানায়, সন্দেহভাজন একজন অপরাধীর ব্যাগ ফেলে পালিয়ে যাওয়ায় তাকে আটক করা সম্ভব হয়নি। ইনপুট অনুযায়ী, এসব অস্ত্রের যোগসূত্র ভারতের সীমান্ত দিয়ে প্রবেশের সঙ্গে রয়েছে বলে ধারণা।

রাজনৈতিক আর নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক ছত্রছায়া ও আন্তর্জাতিক সীমান্ত ব্যবহারের কারণে এই অস্ত্রচোরাচালান চক্র ভাঙা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। তারা মনে করেন, আসন্ন নির্বাচনের পরিবেশ আরও উত্তপ্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, অবৈধ অস্ত্রের মজুত থাকলে নির্বাচনী সহিংসতা আরও বেড়ে যেতে পারে। এ জন্য জরুরি প্রয়োজন সরকারি পর্যায় থেকে কঠোর মনোযোগ ও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া। শিক্ষাবিদরা বলেন, গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বিত প্রচেষ্টায় এই চক্রের রূষ্টি কমানোর পাশাপাশি তথ্যের ভিত্তিতে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।

বিজিবি রাজশাহীর এক কর্মকর্তার মতে, অবৈধ অস্ত্র ও বিস্ফোরক রোধে তারা সর্বদা সজাগ এবং আন্তঃবাহিনী যৌথভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে যাচ্ছে। পাশাপাশি, র‌্যাবের এক সূত্র নিশ্চিত করে জানায়, ভোট কেন্দ্রের মুখে অস্ত্রের মজুদ ও অবৈধ প্রবেশের বিষয়গুলো তারা মনিটরিং করছে। তারা বলছেন, এসব ব্যাপারে সতর্কতা অব্যাহত থাকবে যাতে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণের উপযুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়।

পোস্টটি শেয়ার করুন