মঙ্গলবার, ৩০শে ডিসেম্বর, ২০২৫, ১৫ই পৌষ, ১৪৩২

৬ বছরেও ক্ষতিপূরণ মেলেনি, বিপাকে ৫০০ জমির মালিকরা

কিশোরগঞ্জ-করিমগঞ্জ-চামটাঘাট সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের অধিগ্রহণের জন্য ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অপেক্ষায় থাকা জমির মালিকরা Six বছর সময় পার হলেও তাদের মোট প্রায় ১২৩ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ এখনো পরিশোধ হয়নি। এর ফলে তারা চরম অর্থনৈতিক ও মানসিক ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বসতভিটা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভেঙে দেওয়ার পরও, তাদের পাওনা টাকা এখনো তাঁদের হাতে আসেনি।

রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে জেলার কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ভুক্তভোগী জমির মালিকরা মানববন্ধন করে আর দ্রুত ক্ষতিপূরণের দাবি জানায়। মানববন্ধনের পর তারা জেলা প্রশাসকের কাছে একটি স্মারকলিপিও প্রদান করেন।

এ সময়ে বক্তব্য দেন বিভিন্ন ভুক্তভোগী ও স্থানীয় নেতা ও ব্যবসায়ী। তারা জানান, ভূক্তভোগীরা ছয় বছর ধরে তাদের জমির জন্য ক্ষতিপূরণের আশায় অপেক্ষা করে আছেন। মো. রেনু মিয়া বলেন, আমার ছয় শতাংশ জমি ও একটি ঘর হারিয়েছি। এতদিন হলো, কিন্তু এখনো একটি টাকা পাননি। আমি রাস্তা নির্মাণের জন্য সবকিছু ব্যবস্থা করেছি, তারপরও টাকা দেওয়া হচ্ছে না।

চামটাঘাট বণিক সমিতির সভাপতি আজহারুল ইসলাম আরজু উল্লেখ করেন, তারা ঘরবাড়ি বিক্রি করে টাকা পায়নি, বরং এখনো ক্ষতিপূরণের জন্য অপেক্ষা করছেন। অন্য একজন ভুক্তভোগী কবির উদ্দিন ভূইয়া বলেন, তারা রাস্তা নির্মাণের জন্য তাদের ঘরবাড়ি ভেঙে দিয়েছিলেন, কিন্তু এখনো ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি। তারা দ্রুত অর্থের দাবি জানান।

জেলা প্রশাসনের সূত্র জানায়, ২০২০ সালে এই সংযোগ সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এর আগে, ২০১৯ সালে সাকুয়া বাজার থেকে চামটाघাট পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে উত্তর গণেশপুর, বয়রা, সাকুয়া ও রৌহা মৌজার জমি অধিগ্রহণ করা হয়।

তবে এই অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া এখনো সম্পন্ন হয়নি, ও এলএ’র (ভূমি অধিগ্রহণ) কেস নম্বর ০৯/২০১৯-২০২০-এর আওতায় থাকা এসব মৌজা অধিগ্রহণ কার্যক্রম এখন আটকে আছে। ফলে ক্ষতিপূরণের টাকা এখনো জমির মালিকদের হাতে পৌঁছায়নি।

অপরদিকে, চামটাঘাট বন্দর এলাকার ব্যবসায়ীরা তাঁদের দোকান ঘর মেরামত বা সংস্কার করতে পারছেন না, যা ব্যবসা ও বাণিজ্যের জন্য ক্ষতিপূরক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সংযোগ সড়কটি একাধিক জেলার সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হওয়ায় প্রতিদিন এখানে তীব্র যানজট ও জনদুর্ভোগের ঘটনা ঘটে। রাস্তার অস্তিত্ব যেমন খানাখন্দে ভরা তেমনি কোথাও কোথাও ভেঙে গিয়ে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে উঠেছে। এর ফলে বেশ কিছু দুর্ঘটনা ঘটছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান জানান, অধিগ্রহণের একটি নির্ধারিত প্রক্রিয়া রয়েছে। প্রাক্কলন তৈরি করে চলতি বছর মে মাসে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। তবে এখনো অর্থ ছাড় করা হয়নি। অর্থ বের হলে দ্রুত ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ করা হবে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিল মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, প্রকল্পের পাঁচটি এলএ মামলার মধ্যে চারটির ক্ষতিপূরণ ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে। বাকি একটির প্রাক্কলিত মূল্য ১২৩ কোটি টাকা। বর্তমানে ডিপিপি (অর্থ পরিকল্পনা) এ প্রায় ৬০ কোটি টাকা ঘাটতি রয়েছে। অতিরিক্ত ৬৩ কোটি টাকার প্রয়োজন হওয়ায় সংশোধিত ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন এবং অর্থ ছাড় পেলেই ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ করা হবে।

পোস্টটি শেয়ার করুন