ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতািয়াহুর ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ ধারণা নিয়ে তার মন্তব্যের বিরুদ্ধে একযোগে কঠোর নিন্দা জানিয়েছেন আরব ও ইসলামি দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। এই মন্তব্যের পরিস্থিতিতে, যেখানে ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থী মন্ত্রীরা ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড বিস্তারের ঘোষণা দিয়েছেন, তাদের এই পদক্ষেপের কঠোর সমালোচনা করেন প্রত্যেকটি দেশ।
গতকাল শনিবার, ৩১টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, আরব লীগ, ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) এবং উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) নেতারা এক যৌথ বিবৃতিতে এই নিন্দা প্রকাশ করেন। সৌদি প্রেস এজেন্সি প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, নেতািয়াহু ও তার মন্ত্রিসভার বক্তব্য আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন, যা আরবের জাতীয় নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো হলো সৌদি আরব, বাংলাদেশ, আলজেরিয়া, বাহরাইন, চাদ, কোমোরোস, জিবুতি, মিশর, গাম্বিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, জর্ডান, কুয়েত, লেবানন, লিবিয়া, মালদ্বীপ, মৌরিতানিয়া, মরক্কো, নাইজেরিয়া, ওমান, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, কাতার, সেনেগাল, সিয়েরা লিওন, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইয়েমেন। আরও এই বিবৃতিতে যোগ দেন আরব লীগ, ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা ও উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের মহাসচিবরাও।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা জাতিসংঘের সনদের ধারা, বিশেষ করে অনুচ্ছেদ ২ নম্বর ও প্যারাগ্রাফ ৪-এর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, যেখানে বলপ্রয়োগ বা হুমকি নিষিদ্ধ, সেখানে শান্তি রক্ষায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হবে যা সকল রাষ্ট্র ও জনগণের নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য।
তারা পাশাপাশি দুর্নীতিপূর্ণ পশ্চিম তীরের ‘ইওয়ান’ এলাকায় বসতি নির্মাণের অনুমোদন ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বাধা দেয়ার জন্য নেতানিয়াহুর বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। নম্রভাবে, এই নেতারা ইসরায়েলের ‘আগ্রাসন, গণহত্যা ও জাতিগত নির্মূলের’ কর্মকাণ্ডের কঠোর বিরোধিতা করে, গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি ও মানবিক সহায়তা কার্যক্রম চালুর আহ্বান জানান। তারা অনাহার ও খাদ্য সংকট মোকাবেলায় অপ্রত্যাশিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানায়।
অন্যদিকে, ইউরোপীয় দেশগুলোও এই প্রশ্নে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জার্মানি সতর্ক করে দিয়েছে, ‘ইওয়ান’ ও ‘মা’আলে আদুমিম’ বসতি সম্প্রসারণ পশ্চিম তীরকে বিভক্ত করে ফিলিস্তিনের চলাচলের উপর বাধা সৃষ্টি করবে এবং পূর্ব জেরুজালেম থেকে ফিলিস্তিনকে বিচ্ছিন্ন করবে।
তারা জানান, ইসরায়েলের এই অজুহাতপ্রসূ আচরণ অবৈধভাবে ফিলিস্তিনিদের অধিকার লঙ্ঘন করছে, পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলছে এবং সংঘর্ষের চেহারা বৃদ্ধি করছে। তারা মনে করেন, এই আচরণ শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার দৃষ্টিকোণে ভীষণ ক্ষতিসাধক।
প্রসঙ্গত, ইসরায়েল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের শান্তি ও যুদ্ধবিরতির আর্জিকে উপেক্ষা করে গাজায় দমন-পীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। চলতি বছর ধরে তারা অবিরাম বোমাবর্ষণে অঞ্চলটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছে এবং খাদ্য সংকটে নিপতিত করেছে।
অতীতে, নভেম্বরে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আদালত নেতানিয়াহু ও তার প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের জন্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। গাজায় চলমান সংঘর্ষের জন্য ইসরায়েল বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের মুখোমুখি।