মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার জানিয়েছেন, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO)-এর সহযোগিতায় নরওয়ের গবেষণা জাহাজ “R.V. Dr. Fridtjof Nansen” আগামী ২১ আগস্ট থেকে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় মৎস্যসম্পদ ও ইকোসিস্টেমের জরিপ পরিচালনা করবে। এই প্রায় প চা দিনব্যাপী গবেষণা অভিযানে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১৩ জন বিজ্ঞানী এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের মোট ২৬ জন গবেষক অংশগ্রহণ করবেন।
আজ দুপুরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য তুলে ধরেন। উপদেষ্টা আরও জানান, এই জরিপের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগর থেকে আহরিত মৎস্যসম্পদের অবস্থা বিশ্লেষণ করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা নেওয়া সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, এ জরিপের মাধ্যমে ছোট পেলাজিক ও মেসোপেলাজিক মাছের প্রাচুর্য ও মজুদ নির্ণয়, তলদেশীয় মৎস্যপ্রজাতির বৈচিত্র্য মূল্যায়ন ও সামুদ্রিক ইকোসিস্টেমের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এ ছাড়া সমুদ্রে তাপমাত্রা, লবণাক্ততা, স্রোতের গতি, উৎপাদনশীলতা, গভীর সমুদ্রের জলসঞ্চালন ব্যবস্থা এবং জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত বিভিন্ন ডেটা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সংগ্রহ করা হবে। এমনকি মাইক্রোপ্লাস্টিক, সামুদ্রিক আবর্জনা, অক্সিজেনের পর্যাপ্ততা, কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের অম্লতা সম্পর্কিত গবেষণাও চালানো হবে, যা ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
উপদেষ্টা আরো বলেন, “R.V. Dr. Fridtjof Nansen” এর ২০২৫ সালের জরিপ বাংলাদেশে সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে এক মাইলফলক হয়ে থাকবে। এর মাধ্যমে পাওয়া বৈজ্ঞানিক তথ্য মৎস্যসংরক্ষণ, টেকসই আহরণ, জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে অভিযোজন ও সামুদ্রিক পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি এই গবেষণা বাংলাদেশীর দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করবে।
রয়্যাল নরওয়েজিয়ান দূতাবাস, ঢাকা-এর চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স মিসেস মারিয়ানে রাবে ক্নায়েভেলস্রুদ উল্লেখ করেন, নরওয়ে সবসময় বাংলাদেশের টেকসই মৎস্যসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও সামুদ্রিক গবেষণায় সহযোগিতা করে আসছে। তিনি বলেন, “Dr. Fridtjof Nansen” গবেষণা জাহাজের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য দুই দেশের বন্ধুত্ব আরও গভীর করবে এবং গ্লোবাল খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (FAO) বাংলাদেশ প্রতিনিধি মি. জিয়াকুন শী বলেছেন, নরওয়ের সরকারের সহযোগিতায় FAO-এর EAF-Nansen Programme বাংলাদেশের জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হবে। এর মাধ্যমে টেকসই মৎস্যসম্পদ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে, যা দেশের পাশাপাশি বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য।
এসময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: তোফাজ্জেল হোসেন, অতিরিক্ত সচিব মো: ইমাম উদ্দীন কবীর, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো: আবদুর রউফ এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।